বর্তমানে তোমাদের দিনের একটি বড় অংশ কাটে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের অ্যাকটিভিটির মাধ্যমে। এর মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও গেমস, ইউটিউব ইত্যাদি। বিভিন্ন গবেষণার তথ্যমতে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহারের ফলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হয় “ডোপামিন” নামক এক বিশেষ হরমোন যা হ্যাপি হরমোন নামেও পরিচিত। এই হরমোন মানব মস্তিষ্কে প্রাকৃতিক ভাবে তখনই নিঃসৃত হয় যখন আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হই বা খুশি হই। ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এবং এর মধ্যকার অ্যাক্টিভিটি সমূহের মাধ্যমে ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে এক ধরনের আসক্তি তৈরি হয়। এক সময়ে দেখা যায় ডিভাইস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলে এক প্রকার অস্বস্তি অনুভূত হয়, কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না এবং অবসাদের সৃষ্টি হয়। তাই আজ তোমাদের জানাবো ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি দূর করার পাঁচটি কার্যকরী উপায়।
ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যক্তিগত শিডিউল তৈরি করো
বর্তমানে দৈনন্দিন জীবন-যাত্রায় ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার এর প্রয়োজনীয়তা এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে এটি থেকে নিজেকে দূরে রাখা বাস্তবসম্মত নয়। তবে এর সীমিত ব্যবহার অর্থাৎ কেবল প্রয়োজনীয় কাজগুলোই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে শিডিউল অনুযায়ী সেরে ফেলতে পারলে দেখা যাবে দিনের দীর্ঘ একটি সময় ডিভাইস ব্যবহার ছাড়াই কেটে গিয়েছে। তাই ইন্টারনেট কেন্দ্রিক সকল কাজগুলো একটি নোট খাতায় নোট করে রাখতে পারো। পরবর্তীতে সেই নির্দিষ্ট সময়ে সেইসকল কাজ একসাথে সেরে নাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা কিংবা শিডিউল নির্ধারণ করে ফেলো।
ডিজিটাল ডিভাইসটি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখো
তোমাদের লেখা-পড়ার কিংবা পরিবারের সাথে সময় কাটানোর সময় ডিজিটাল ডিভাইসটি একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখতে পারো। ডিজিটাল ডিভাইস সর্বদা হাতের কাছে রাখলে নিজের অজান্তেই বার বার ব্যবহার করা হয় এছাড়া বিভিন্ন অবাঞ্ছিত নোটিফিকেশনের প্রভাবে তোমাদের মনোযোগ নষ্ট হতে পারে।
অবসর সময়ে স্বাস্থ্যকর বিনোদন গ্রহণ করো
তোমাদের অবসর সময়গুলোতে চেষ্টা করো বিভিন্ন গল্পের বই পড়ার। অথবা কাটাতে পারো প্রকৃতির মাঝে একান্ত কিছু সময়। দৈনন্দিন পড়ালেখার চাপ ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ভীরে যাদেরকে সময় দেয়া হয় না তারা হচ্ছে পরিবার। তাই যখনই অবসর পাবে চেষ্টা করো তাদের সাথে গল্প করার, মনে রাখবে এই সময়টুকু কোনোপ্রকার ডিভাইসের ব্যবহার করা ছাড়াই একান্তভাবে তাদের সাথে সময় কাটাবে।
ডিজিটাল ডিটক্স পদ্ধতির প্রয়োগ
আমরা যেমন শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান দূর করতে বিভিন্ন ধরনের ডিটক্স ওয়াটার পান করে থাকি তেমনি ব্যক্তিগত জীবন থেকে ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি দূর করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে ডিজিটাল ডিটক্স পদ্ধতি। বিখ্যাত রিসার্চ পাবলিকেশন Research Gate এ প্রকাশিত অস্ট্রিয়ান দুজন গবেষকের ডোপামিন ডিটক্স নিয়ে করা গবেষণা পত্রের তথ্যানুযায়ী ডোপামিন ডিটক্সের ফলে লেখা-পড়া এবং কমিউনিকেশন স্কিলের উপর ইতিবাচক প্রভাব পরে। এই পদ্ধতি হচ্ছে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় অথবা টানা কয়েকদিন অবধি ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। তবে শুরুতেই দীর্ঘ সময়ের চ্যালেন্জ নেয়া সঠিক নয়, এর প্রয়োগ হতে হবে প্রতিদিন ছোট ছোট টার্গেট পূরণের মাধ্যমে। যেমন প্রথম দিন ২০ মিনিটের একটি টার্গেট এর পরের দিন ৩০ মিনিট কিংবা এভাবে একইদিনে বেশকয়েকটি ছোট ছোট টার্গেট। এর ফলে ধীরে ধীরে তোমাদের মাঝে ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তির সমস্যা অনেকটাই হ্রাস পাবে এবং এর ব্যবহার তোমার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারো
যেকোনো বিষয়েই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা একটি ইতিবাচক দিক। নিজের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার পরও যদি আশানুরূপ ফল পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে শরণাপন্ন হতে পারো কোনো সাইকোলজিকেল থেরাপিস্ট, কাউন্সিলর কিংবা সাইক্রিয়াটিস্টের।
আশা করি এই কন্টেন্ট টি পড়ার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের ডিজিটাল ডিভাইস আসক্তি ও এটি দূর উপায় সমূহ সম্পর্কে জানতে পেরেছো। এর ফলে তোমরা তোমাদের সহপাঠিদেরও এই বিষয়ে জানাতে ও সচেতন করতে পারবে। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে লিখে জানাও আমাদের কমেন্ট বক্সে। পরবর্তী কনটেন্টে ফিরে আসবো নতুন কোনো বিষয় নিয়ে।