কেমন ছিলো তারকাদের কৈশোর? (পর্ব ০২) 

আজ তোমাদের জানাবো লিওনেল মেসির কৈশোর নিয়ে। 

মেসি ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি ইস্পাতের কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী।

পাঁচ বছর বয়সে মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন, যার কোচ ছিলেন তার বাবা হোর্হে। 

১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে মেসি রোজারিও ভিত্তিক ক্লাব নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজে যোগ দেন। 

১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও সেসময় তারা মেসির চিকিৎসা খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। এ চিকিৎসার জন্যে প্রতিমাসে প্রয়োজন ছিল ৯০০ মার্কিন ডলার।

স্পেনের বার্সেলোনা ক্লাবের তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোন কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। 

বার্সেলোনা মেসির চিকিত্‍সার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তার বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মেসিকে বার্সেলোনার যুব একাডেমিতে ভর্তি করে নেয়া হয়।

আর্জেন্টিনার রোজারিও থেকে মেসির গোটা পরিবারও বার্সেলোনায় চলে এসেছিল। ভিন্ন এক দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে তারা মানিয়ে নিতে পারেননি। আর্জেন্টিনার জন্য মেসির মা ও ভাই-বোনদের মন কাঁদতো। 

এক রাতে তাই পারিবারিক বৈঠক বসল। প্রশ্ন, এখন কী করবো? স্পেনেই থাকবয়ো নাকি আর্জেন্টিনায় ফিরে যাবো সবাই? 

এই প্রশ্নের উত্তর একমাত্র মেসিই দিতে পারতো। কারণ, সবকিছুই তো তাকে ঘিরে। 

বাবা মেসিকে জিজ্ঞেস করলেন,‘তুমি কী চাও?’ ১২ বছর বয়সী মেসি বলেছিল, ‘আমি থাকতে চাই। আমি বার্সেলোনার হয়ে ফুটবল খেলতে চাই।’ তারপর বার্সেলোনায় মেসির সঙ্গে শুধু তার বাবা থাকলেন।

ভাবো তো একবার, যদি সেদিন মেসি আর্জেন্টিনায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে কি আমরা আজ এই মেসিকে পেতাম? 

শুধু বাবা তার সাথে থাকলেও পরিবারের বাকি সবাই আর্জেন্টিনাতে। মেসির মন খারাপ হতো। পরিবারকে মিস করতেন। কখনো কখনো কান্নাও করেছেন। কিন্তু ফুটবল ঘিরে তার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে নিজেকে শক্ত করে বার্সেলোনাতেই দিন কাটতে থাকে তার। 

রোগটা ধরা পড়ার পর প্রতি রাতেই মেসিকে পায়ে ইনজেকশন নিতে হতো। সাত দিন ডান পায়ে, পরের সাত দিন বাঁ পায়ে। এভাবে তিন বছর হরমোনের ইনজেকশন নিতে হয়েছে। মেসি নিজের হাতেই ইনজেকশনগুলো পায়ে পুশ করেছেন। জেরার্দো গ্রিঘিনি একসময় তাঁর সঙ্গে খেলতেন। জেরার্দো জানিয়েছেন সেসব দিনের কথা, ‘সে খুব স্বাভাবিকভাবে ইনজেকশনগুলো পুশ করত। জানত, ফুটবলার হতে তাকে এটা করতেই হবে। আমার মনে হয় না ১০-১১ বছর বয়সী আর কারও এতটা মানসিক শক্তি থাকতে পারে, যে ওই বয়সে ভাববে, আমি এখন এটা করলে ভবিষ্যতে স্বপ্নপূরণে কাজে লাগবে।’

স্বপ্ন পূরণে কতটা একাগ্রতা থাকলে শৈশব-কৈশোরেই মানুষ এতটা মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারে! 

মেসির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। কত শত রেকর্ড, কত শত পুরস্কার তার নামের পাশে! বাকি ছিলো শুধু ফুটবল বিশ্বকাপ। 

২০২২ সালে কাতারে আয়োজিত বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ী হয়ে সেই স্বপ্নও পূরণ করেছেন মেসি। 

ফুটবলের জীবন্ত এই জাদুকর কৈশোরেই স্বপ্ন দেখেছিলেন, জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন এবং একাগ্রচিত্তে সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য পরিশ্রম করে গিয়েছেন। 

তোমরা যারা মেসিকে পছন্দ করো, শুধু ফুটবল নয় তার জীবনের গল্প থেকেও তোমরা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে সফলতার গল্প লিখতে পারো!
-শারমিন কবীর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *