কনসেন্ট কালচার: সম্মতি নেয়ার রীতি (পর্ব ০২)

(পর্ব ০২)

কনসেন্ট কালচারের প্রয়োজনীয়তা

কনসেন্ট কালচারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এর অনুপস্থিতিতে সামাজিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে বিশৃঙ্খলা ও অবসাদ। এর ফলে সৃষ্ট নেতিবাচকতা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। কনসেন্ট কালচার কেবল মাত্র যৌনতার বিষয়ে সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে প্রতিটি পর্যায়ে। সমাজে কনসেন্ট কালচার প্রচলনে কমে আসে নৃশংসতা ও হয়রানী মূলক কর্মকান্ডের পরিমাণ।

যৌনতার ক্ষেত্রে কনসেন্ট কালচার

মজার বিষয় হচ্ছে, অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমরা কনসেন্ট কালচার কিছুটা প্র্যাকটিস করলেও যৌনতার ক্ষেত্রে কেনো যেনো কনসেন্ট নেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি না। পপুলেশন কাউন্সিলের এক গবেষণায় দেখা যায় ৭৬ শতাংশ বাংলাদেশী কিশোরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এবং বাহিরে তাদের ছেলে সহপাঠী, বন্ধু কিংবা পার্টনারের দ্বারা যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়।  যা তুলে ধরে গোটা সমাজের একটি ভয়ংকর চিত্র যার প্রধান কারণ কনসেন্ট কালচারের অনুপস্থিতি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কনসেন্ট কালচার : 

১৭টি মানবাধিকার সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’ – এর একটি গবেষণা মতে দেশে বহু কিশোরী ও নারী বিবাহ পরবর্তী তাদের স্বামীদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যা শতকরা ২৭.৩ শতাংশ। এইসব ভুক্তভোগী কিশোরী ও নারীরা বলেন, তারা তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্বামীর জোরজবরদস্তির কারণে শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য হন। যার অন্যতম কারণ সমাজে কনসেন্ট কালচারের অনুপস্থিতি। মনে রাখতে হবে, সম্মতিহীন যে কোনো শারীরিক স্পর্শই ধর্ষণের অন্তর্ভুক্ত।

সমাজে কনসেন্ট কালচার প্রতিষ্ঠায় তোমাদের করণীয় 

কনসেন্ট কালচারের অভাবে সমাজে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে হাজারো নারী, তাই এই কালচার এর প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে পারো তুমিও।

১. কনসেন্ট কালচার সম্পর্কে নিজে জানো এবং অন্যকে জানাও।

২.ভিকটিম ব্লেমিং এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।

৩. যেকোনো ধরনের অপ্রত্যাশিত স্পর্শ কিংবা বুলিং এর স্বীকার হলে চুপ না থেকে প্রতিবাদ করো এবং অভিভাবকদের অবহিত করো।

৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি মূলক বার্তা শেয়ার করো।

কনসেন্ট কালচার ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষ হিসেবে তোমার পারিবারিক শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং চারিত্রিক উৎকর্ষতাকে প্রকাশ করে। মনে রাখা জরুরি, অন্যের ব্যক্তিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে শুরু করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন কোনোটাই একজনের ইচ্ছের ওপর নির্ভর করেনা, সম্মতি হতে হবে সর্বদা দ্বি-পাক্ষিক।

– মোঃ রাফসান তালুকদার

(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *