বুলিং একটি সামাজিক ব্যাধি। যা যে কোনো মানুষকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলে। কৈশোরে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক অবস্থা অনেক নমনীয় থাকে। এই সময়ে বুলিংয়ের শিকার হলে তা তাদেরকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার পাশাপাশি জীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে।
বুলিং কী?
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, বুলিং হলো অপ্রত্যাশিত এবং আক্রমণাত্মক আচরণ, যা স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায়। এ আচরণের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার অসামঞ্জস্য প্রকাশ পায়। এই আচরণ আক্রান্ত শিশু বা কিশোরের ওপর ক্রমাগত চলতে থাকে। তবে এ আচরণ সাধারণত স্কুলে যাওয়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে দেখা গেলেও যেকোনো বয়সের ব্যক্তির মধ্যেও দেখা যেতে পারে।
ন্যাশনাল বুলিং প্রিভেনশন সেন্টারের মতে, কিছু বুলিং শারীরিকভাবে শনাক্ত করা গেলেও এটি কখনো কখনো নীরবে বা মানসিকভাবেও চলতে পারে। যেমন কোনো গুজব বা ইন্টারনেটে কোনো মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বুলিং হওয়া ব্যক্তির মানসিকভাবে ক্ষতি করা।
বুলিংয়ের প্রকারভেদঃ
মানুষ সাধারণত চার ধরনের বুলিংয়ের শিকার হয়ে থাকে।
- শারীরিক
- মৌখিক
- সামাজিক
- সাইবার
বুলিংয়ের ক্ষতিকর প্রভাবঃ
বুলিংয়ের শিকার হওয়া কিশোর-কিশোরীদের –
- আত্মবিশ্বাস কমে যায়
- সব সময় আতংকিত থাকে
- নতুন কোনো মানুষের সাথে মিশতে ভয় পায়
- নতুন কোনো বন্ধু তৈরি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে
- বন্ধুদের আড্ডা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে
- একাকীত্বে ভুগতে শুরু করে
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে
- হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে
- কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মত ঘটনাও ঘটে থাকে
বুলিং প্রতিরোধে করনীয়ঃ
- শিক্ষদের এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। কেউ বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে কি না লক্ষ্য রাখতে হবে। কেউ বুলিংয়ের শিকার হলে তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া এবং যে বুলি করছে তাকে বুঝিয় এই কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
- অভিভাবকদের উচিৎ সন্তানের সাথে বুলিং নিয়ে কথা বলা।
- অভিভাবক যদি বুঝতে পারেন তার সন্তান অন্যদের বুলি করছে, তাহলে সন্তানের সাথে কথা বলে তাকে এই কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে। তারপরও যদি সে বুলি করা ত্যাগ না করে তবে তাকে কোনো মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়া যেতে পারে।
- মিডিয়া বুলিংয়ের খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে নিয়মিত সচেতনতামূলক কন্টেন্ট প্রচার করতে পারে।
- যারা তরুণ প্রজন্মের কাছে অনেক জনপ্রিয়, তারা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বুলিং প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করতে পারেন।
প্রিয় কিশোর-কিশোরী বন্ধুরা, বুলিং কিন্তু কোনো ফান নয়। তোমার কোনো বন্ধু যদি বুলিংয়ের শিকার হয় তবে তার সহযোগিতায় এগিয়ে যাও। তোমার কোনো বন্ধু যদি অন্যদের বুলি করে তবে তাকে বোঝাও। এক্ষেত্রে তোমরা শিক্ষদের সহযোগিতাও নিতে পারো।
এই আর্টিকেলটি পড়ার পর আমরা আশা করতে পারি, তোমরা কখনোই কাউকে বুলি করবে না। আর কেউ যদি বুলিংয়ের শিকার হও তবে অবশ্যই সেটি তোমার অভিভাবক এবং শিক্ষকদের সাথে শেয়ার করো। জানাতে পারো আমাদেরও। তোমাদের সহযোগিতায় সব সময় তোমাদের পাশে আছে 7teen।
– শারমিন কবীর