বয়ঃসন্ধিতে ইনসমনিয়া? জেনে নাও প্রতিকারের ৫টি উপায়

স্লিপফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রতি রাতে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুম খুবই প্রয়োজনীয় যেহেতু এসময় তারা খুব দ্রুত শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানসিক বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে ৭৩ শতাংশ হাইস্কুল শিক্ষার্থী নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরিমাণে ঘুমাতে পারে না। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ রিপোর্ট করে, বিশ্বব্যাপী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনিদ্রার প্রবণতা এখন প্রায় ২৩.৮%। 

অথচ ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতায় ভোগা কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য, সুখ এবং শিক্ষাগত অর্জনকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই চলো দেখে নিই কীভাবে প্রতিকার করা যায় টিনএজ ইনসমনিয়ার।

নির্দিষ্ট স্লিপ শিডিউল মেনে চলা

কৈশোরে দেরীতে ঘুমানোর একটা প্রবণতা দেখা যায়। “Why We Sleep” বইয়ের লেখক ঘুম বিশেষজ্ঞ ডক্টর ম্যাথিউ ওয়াকারের মতে কিশোর-কিশোরীদের জন্য যা একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা।

তবে এর মানে এই নয় যে তারা একেকদিন একেক সময়ে ঘুমাতে যাবে! দেরীতে হলেও ঘুম থেকে ওঠার সময়টা মাথায় রেখে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে। নিজের স্কুল ও শিডিউল মাথায় রেখে যতোটা সম্ভব ঘুমের টার্গেট ম্যাচ করার মতো একটা সহজ কিন্তু কার্যকরী রুটিন তৈরী করে তা মেনে চলতে হবে। 

ঘুমের জন্য রিল্যাক্সিং পরিবেশ তৈরি করা

স্ট্রেস ঘুমের সবচেয়ে বড় অন্তরায়। তাই ঘুমের ঘরে থাকবে না জোরালো আওয়াজ বা, ঝলমলে আলো। এরবদলে হালকা শব্দের গান, সাগরের মৃদু গর্জন বা বৃষ্টির ঝুম শব্দ এবং অন্ধকার বা নরম আলোর উপস্থিতি ঘুমাতে সাহায্য করবে।

এছাড়াও বেডটাইমের আগে কিছু রিল্যাক্সিং রিচুয়াল রাখা যেতে পারে। যেমনঃ জার্নালিং করা, ক্লাসিক্যাল গান শোনা, হালকা কোনো বই পড়া বা স্কিন কেয়ার করা। এই কাজ গুলো ঘুমানোর পুর্বে নিয়মিত করলে একটা সময় তা ব্রেইনকে স্লিপ হরমোনের জন্য সিগন্যাল দিবে, এবং ঘুমাতে সাহায্য করবে।

ন্যাপিং এর পরিমাণ কমানো

এডিনোসিন নামক ব্রেনের একটি বাই প্রোডাক্টের প্রেশার ঘুমের জন্য ব্রেইন কে স্টিমুলেট করে। সারাদিনে একটু পরপর যদি ন্যাপ নেওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে তা ব্রেইনের জমা হওয়া এডিনোসিন এর প্রেশার কমিয়ে দেয়। সারাদিন এই প্রেশার ন্যাপিং এর মাধ্যমে কমালে দেখা যাবে রাত্রে টায়ার্ড লাগছে না, ঘুম আসছে না। তাই ঘন ঘন ও দুপুরের পর থেকে আর ন্যাপ নেওয়া উচিত না। 

ঘুমের পূর্বে ব্লু লাইট ও স্ক্রিন টাইম কমানো

আধুনিক সময়ে দিনের বেশীরভাগ সময় সূর্যালোক থেকে দূরে থাকার কারণে এবং রাতে অন্ধকারের বদলে ব্লু-লাইট বিশিষ্ট যন্ত্র যেমন লাইট বাল্ব, ফোনের স্ক্রিন ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে দিন ও রাতের পার্থক্য করা আমাদের শরীরের জন্য একটু সমস্যার হয়ে যাচ্ছে। ব্লু লাইট মেলাটোনিন বা আমাদের স্লিপ হরমোন কে ব্লক করে এবং জাগ্রতভাব সৃষ্টি করে।

এজন্য রাত হলেই ব্লুলাইটের ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া উচিত। ফোন, ল্যাপটপ ও ট্যাবের আই কমফোর্ট বা নাইট লাইট শিডিউল অন করে রাখতে হবে যেন তা ব্রেইনকে সিগ্ন্যাল দিয়ে বোঝাতে থাকে রাত হয়েছে।

ডায়েটে গুরুত্ব দেওয়া

ক্যাফেইন অত্যন্ত শক্তিশালী একটা ব্রেইন স্টিমুল্যান্ট যা তোমার ব্রেইনের ঘুম রিসেপ্টরকে আটকে দেয়। সাধারণত কৈশোরে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার যেমন- চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক্স এড়িয়ে চলাই উচিত। আর পান করলেও তা পরিমিত পরিমাণে এবং বিকেলের পূর্বে।  

এর বদলে জেসমিন, ক্যামোমাইল, তুলসি বা অন্য কোনো হার্বাল চা খাওয়া যেতে পারে। রাতের বেলা ভারী ও ফ্যাটি খাবারও এড়িয়ে চলা উচিত, যেহেতু ঘুমে মেটাবলিক হার কমে যাওয়ায় এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক হতে পারে এবং ঘুম ভেঙে যেতে পারে। 

এগুলো ছাড়াও আরো কয়েকটা জিনিসে খেয়াল করা উচিত। ঢিলাঢালা জামা, আরামদায়ক পরিবেশ ও ঠান্ডা কক্ষও ঘুমাতে সাহায্য করে। উৎকণ্ঠা নিয়ে ঘুমাতে গেলে সাধারণত ঘুমে সমস্যা হয়। মনে রাখবে, সারাদিন ঘুমের কথা ভাবলেও ঘুমের সময় মোটেও ঘুমের কথা ভাবা যাবে না! প্রিয় কিছু নিয়ে ভাবতে ভাবতে তলিয়ে যাও ঘুমের দেশে। 


-শারমিন কবীর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *