তোমার পরিবারে কেবলই এক ব্র্যান্ড নিউ সদস্য যুক্ত হয়েছে, তোমার ছোট্ট ভাই! ওর তুলতুলে গাল আর মায়া মায়া চোখ তোমার মনে আদর ও ভালোবাসার পাশাপাশি প্রশ্নও জেগেছে, বাচ্চারা আসলে আসে কোত্থেকে?!
পরিবারের এই ক্ষুদ্র সংযোজনটি কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে কৌতূহল টাই স্বাভাবিক। বিশেষ ডেলিভারির মাধ্যমে আনা হয়েছে? নাকি Storks মুভিতে যেমন দেখিয়েছিল ওমন সারস পাখিরা নিয়ে এসেছে? সম্ভবত, হাসপাতালের উপহারের দোকানে ‘বেবি’জ’ সেকশনে কিনতে পাওয়া যায়?
সঠিক উত্তরটি যদিও খুব সোজা, এরপরও বিষয়টিকে কিছুটা জটিল বলে মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। তোমাদের এই সব প্রশ্নের সহজ উত্তর নিয়েই আমাদের আজকের লেখা।
মৌলিক ধারণা:
শিশুরা কোথা থেকে আসে তা জানতে হলে আমাদের জানতে হবে জীবন কীভাবে শুরু হয়। জীব জগতের সকল প্রাণির মতোই মানুষেরও শুরু হয় মাত্র একটি কোষ থেকে, যাকে বায়োলজির ভাষায় বলা হয় জাইগোট।
সহজ ভাষায়, যখন বাবা-মায়েরা সিদ্ধান্ত নেন যে তারা সন্তান নিতে চান, তখন তারা একটি বিশেষ উপায়ে একত্রিত হন। এসময় বাবার শুক্রাণু নামক একটি ক্ষুদ্র সাঁতারু মায়ের শরীরে থাকা ডিম্বাণুর সাথে যোগ দেয়।
শুক্রাণুর আর ডিম্বাণুর মিলনে জাইগোট সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে মায়ের দেহে জরায়ু নামক একটি বিশেষ স্থানে ভালোবাসা আর যত্নে বাড়তে থাকে।
মাতৃগর্ভে এই বৃদ্ধি প্রায় নয় মাস ধরে ঘটে। বেশিরভাগ অঙ্গই তিন মাসের মধ্যে গঠিত হয়। এসময় গর্ভে থাকা এই কোষপিণ্ডকে বলা হয় ভ্রুণ। ছয় সপ্তাহেই ভ্রূণটি প্রায় ৪ মিমি লম্বা হয় এবং হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের বিকাশ শুরু হয়। ছয় মাসের মধ্যে বিভিন্ন অঙ্গের এই বিকাশ অব্যাহত থাকে। পেট বা পেটের ঠিক নিচেই জরায়ুর অবস্থান হওয়ায়, কেউ কেউ ভুল ধারণা রাখে যে বাচ্চারা মায়ের ‘পেটে’ বড় হয়।
এরপর প্রায় নয় মাস পর মাতৃগর্ভে যখন বাচ্চার বৃদ্ধি ও বিকাশ সম্পূর্ণ হয়, তখন সাধারণ ডেলিভারির মাধ্যমে মায়ের যোনীপথ দিয়ে পৃথিবীতে তার আগমণ ঘটে নবজাতক হিসেবে! অনেক শিশুই আবার সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে ভূমিষ্ট হয়।
আরো যা যা মনে রাখতে হবেঃ
উপরে আলোচিত অংশটুকু পৃথিবীতে নতুন জীবন আসার সাধারণ আলোচন হলেও বড় হওয়ার সাথে সাথে তুমি রিলেশনশীপ ও ঘনিষ্ঠতার ধরণ এবং নতুন জীবন আগমণ সম্পর্কে আরও কিছু জানতে পারবে।
কিন্তু আপাতত, শুধু জেনে নাও যে, আইভিএফ, সারোগেশন, টেস্টটিউব এবং এ্যাডপশন বা দত্তক গ্রহণ সহ আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে একটি পরিবারে নতুন সদস্য যুক্ত করার। ভিন্ন ভিন্ন পন্থা হলেও এই সবকিছুর মাঝে যে বিষয় ধ্রুবক থাকে তা হচ্ছে ভালোবাসা!
তাই, পরের বার যখন তুমি নিজের মনে ভাববে যে তোমার শিশু ভাই বা বোন কোথা থেকে এসেছে, মনে রাখবে সে এসেছে তোমার বাবা-মায়ের ভালবাসা থেকে। এবিষয়ে আরও প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে জিজ্ঞেস করতে মোটেও দ্বিধা করবে না।
–শারমিন কবীর