একবিংশ শতাব্দীতে ছোট বড় সকল বয়সের মানুষের জীবনে ইন্টারনেট একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে এই অবিচ্ছেদ্য অংশের সীমাহীন ব্যবহার কিশোর-কিশোরীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দেখা দিতে পারে সাইবার আসক্তি। যার ফলে কিশোর-কিশোরীদের প্রতিদিনের জীবন ধারার অবনতি ঘটতে পারে । সেল্ফ ডিসিপ্লিন ঠিক থাকে না। কিশোর-কিশোরীরা সময়ের মূল্য উপলব্ধি করতে পারে না। তা উপলব্ধি করতে পারলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যার ফলে জীবন নিয়ে ভালো কিছু করার প্রতিভা হারায় কিশোর-কিশোরীরা। চলুন দেখে নিই সাইবার আসক্তি কিশোর-কিশোরীদের জীবনে কী কী প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিদিনের কাজে সাইবার আসক্তির প্রভাব
কিশোর-কিশোরীদের সাইবার আসক্তি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিদিনের কাজে বাধা দেয়। অনেক সময় ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার কিশোর-কিশোরীদের বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। যেমন কোনো মুহূর্তকে বাস্তবে উপভোগ না করে ইন্টারনেটে সময় কাটানো বা আশেপাশে মানুষ থাকলেও তারা অনলাইন বন্ধুদের সাথে ইন্টারনেটে ব্যস্ত থাকা । এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে করতে কিশোর-কিশোরীরা ইতিমধ্যে প্রতিদিনের কাজের অনেকটা ক্ষতি করে বসে। অনেক দরকারি কাজ না করে ফেলে রাখে এবং শেষ মূহুর্তে অনুশোচনা করে। এমন করে অনেক জরুরি কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায় ।
নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়া
প্রতিদিনের কাজ ঠিক সময়ে না করে ইন্টারনেটের কাছে সীমাবদ্ধ হয়ে আত্মসংযোম লোপের পরিচয় দেয় কিশোর-কিশোরীরা তাদের মধ্যে শুরু হয় নির্ভরশীলতা। অনেকে পরিক্ষার সময় মোবাইল ফোনের আসক্তি কমিয়ে আনতে অভিভাবকের কাছে স্মার্ট ফোন জমা দিয়ে রাখে, তে করে নিজ থেকে মোবাইলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে শেখে না তারা। এমন অবস্থায় কিশোর-কিশোরীরা নিজের উপর ভরসা করতে পারে না। এভাবে বড় বড় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীরা অন্যদের উপর নির্ভরশীল থেকে যায়।
সাইবার বুলিং ও নিরাপত্তা
কিশোর-কিশোরীদের নতুন নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অনেক কিছু অজানা থাকে। এমন অবস্থায় সাইবার বুলি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কি করতে হয় সে বিষয়ে তারা সচেতন থাকে না। ইন্টারনেটে কিশোর-কিশোরীরা অনেক প্রতারণা বা স্প্যাম এর সম্মুখীন হয়। ইন্টারনেটে কিশোর-কিশোরীরা অনেক সময় বাজে মন্তব্য বা খারাপ কথা দিয়ে একজন আরেকজনের মনোবল নষ্ট করে। বাবা মা ও অভিভাবকদের বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবে কিশোর-কিশোরীদের সতর্ক করতে হবে এমন কাজের সাথে জড়িয়ে না পড়ার জন্য।
কৈশোরে অভিযোজন-প্রবণতা
সাইবার আসক্তি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু কাজ করা যেতে পারে। যেমন বিভিন্ন বিষয়ে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ নেওয়া। ইন্টারনেটে অসামাজিক অকেজো কিছুতে সময় ব্যয় না করে কিশোর-কিশোরীরা কোনো প্রোগ্রাম বা দক্ষতা তৈরির কাজে সময় দিতে পারে । ইন্টারনেট দিয়ে যোগাযোগ দক্ষতা গড়ে তোলা সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং করে কিশোর-কিশোরীরা অর্থ উপার্জন করতে পারে ইন্টারনেট থেকে ।
কৈশোরে সাইবার আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে যা যা করতে পারো
১. নিজের ডেইলি রুটিনকে গুরুত্ব দিতে পারো।
২. পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে পারো।
৩.ইন্টারনেট থেকে আইডিয়া নিয়ে কোনো শখের কাজ করতে পারো।
৪. বই পড়তে পারো।
৫. শুধু অবসর সময়ে অনলাইন বন্ধুদের সময় দাও ও মত বিনিময় করো।
৬. সমবয়সী বন্ধুদের সাথে কোনো ইভেন্ট বা অন ফিল্ড কাজে যোগ দিতে পারো।
৭. সামাজিক কাজে যুক্ত হতে পারো।
৮. ভলেন্টিয়ারিং করতে পারো কোনো প্রোগ্রামে।
–শারমিন কবীর