পরিবার আমাদের প্রতিটি মানুষকে গড়ে তোলে একজন পরিণত মানুষ হিসেবে। মানুষের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা ও মননের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে পরিবার।
তাই পরিবারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সুস্থ্য ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের। এর জন্য তোমরা নিতে পারো বেশ কিছু পদক্ষেপ।
এক সাথে সময় কাটাও: পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে নিয়ে একসাথে সময় কাটাও। দৈনন্দিন পড়ালেখা ও ব্যস্ততার মাঝে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করো কেবল পরিবারের মানুষগুলোর সাথে একান্তে সময় কাটানোর জন্য। আমেরিকান লেখিকা জোয়ানা গেইনস বলেন- “পরিবারের সাথে সময় কাটানো আমার কাছে এক বিশেষ উপহারস্বরূপ”।
পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও: পরিবারের সদস্যদের মতামত ও সিদ্ধান্তের প্রতি তোমাকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং তাদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তাই, তারা কোনো অনুরোধ করলে তা রাখার চেষ্টা করো এবং কোনো বিষয়ে বারণ করলে তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করো।
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনো বিষয় উপভোগ করো: সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোকে রূপান্তরিত করে ফেলো তোমার পারিবারিক কোয়ালিটি টাইমে! এই দিনটিতে পরিবারের সকলকে নিয়ে দেখতে পারো পারিবারিক পুরোনো ছবির এলবামগুলো কিংবা সকলকে নিয়ে দেখতে পারো সুন্দর কোনো মুভি/নাটক। অথবা সবাই মিলে খেলতে পারো কোনো খেলা।
পারিবারিক কাজে হাত বাড়াও: পারিবারিক সকল কাজে পরিবারের সদস্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করো। যেকোনো ছোট বড় কাজ যেমন, রুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, খাবার পরিবেশনে মাকে সাহায্য করা, ঘরের আসবাবপত্র পরিষ্কার করা ইত্যাদি। এতে করে পরিবারের সকলের কাজ যেমন সহজ হবে তেমনি তৈরি হবে একটি সুস্থ পারিবারিক বন্ধন।
পরিবারের সকলের সাথে খেতে বসো: বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের R.I.M Dunbar নামক একজন গবেষক তার প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন, যে সমস্ত ব্যক্তি ঘরোয়া পরিবেশে পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে বসে খাবার গ্রহণ করে তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী হাসি-খুশি এবং সুখী জীবন যাপন করে।
পরিবারের সদস্যদের মান-অভিমানে তাদের পাশে থাকো: পরিবারের প্রতিটি সদস্যের একে অপরের প্রতি থাকে সীমাহীন ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকেই একে অপরের প্রতি তৈরি হয় কিছু প্রত্যাশার (Expectations)। অনেক সময় দেখা যায়, এই বিষয়গুলোর কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে যায়, যার কারণে পরিবারের সদস্যদের মাঝে সৃষ্টি হয় মান-অভিমানের। এই সময়ে তোমরাই পারো তোমাদের ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে তাদের মান-অভিমান ভাঙিয়ে তাদের পাশে থাকতে। এতে করে যেমন বৃদ্ধি পাবে পরিবারের প্রতিটি মানুষের সাথে তোমার আত্মিক সম্পর্ক, তেমনি সৃষ্টি হবে একটি সুস্থ্য ও সুখী পারিবারিক পরিবেশ।
এই সকল বিষয় প্রয়োগ করার মাধ্যমে তুমিও তৈরি করতে পারো তোমার পরিবারে সদস্যদের মাঝে একটি দৃঢ় বন্ধন ও একটি সুস্থ্য-সুন্দর পরিবেশ।
– মোঃ রাফসান তালুকদার
(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)