বয়ঃসন্ধিতে বন্ধুত্ব

‘‘বন্ধু’’ অনেক আপন এবং প্রিয় একটি শব্দ, তাই না? বন্ধুত্ব নিয়ে যে কত গল্প, কত উপন্যাস, কত মুভি আছে, তা লিখে শেষ করা যাবে না! পাশাপাশি বাস্তব জীবনেও বন্ধুত্বের অনেক গল্প শোনা যায়। একটি ভালো বন্ধুত্ব কিন্তু একদিনে গড়ে ওঠে না! একটি ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা এবং সেটি টিকিয়ে রাখার পেছনে অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। চলো, তেমন কিছু বিষয় জেনে নিই – 

সঠিক বন্ধু নির্বাচনঃ বয়ঃসন্ধিতে সঠিক বন্ধু নির্বাচন কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ! আর্থিক প্রাচুর্য, দামী পোশাক বা দামী গ্যাজেট ব্যবহার করে দেখেই কাউকে বন্ধু বানিয়ে ফেলো না! বন্ধুত্ব করার আগে দেখে নাও তোমার দৃষ্টিভঙ্গি, তোমার চিন্তা ভাবনার সাথে তার মিল আছে কি না। লক্ষ্য করো সে ইতিবাচক এবং আশাবাদী মানুষ কি না। আরো লক্ষ্য করো সে  অন্য মানুষের সাথে কেমন আচরণ করে, ভালো না খারাপ? সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে বন্ধু নির্বাচন করবে। মনে রাখবে, একজন ভালো বন্ধু তোমার জীবনের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে, আর একজন খারাপ বন্ধু তোমাকে ধ্বংস করে ফেলতে পারে! 

তুমি তোমার মতোই হওঃ যে কোনো সুন্দর সম্পর্ক রক্ষা করতে গেলে অবশ্যই তোমাকে সৎ থাকতে হবে। বন্ধুত্বের শুরুতেই তাই তুমি নিজেকে যেভাবে জানো, সেভাবেই প্রকাশ করো। তুমি যা নও, সেভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে যেয়ো না। তাহলে কোনো এক সময়ে দেখবে বন্ধুদের সাথে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। বন্ধুত্বও নষ্ট হতে পারে। 

সহানুভূতিশীল হওঃ বন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল হও। যখন তোমার কোনো বন্ধু কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় বা কোনো মানসিক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যায়, তখন মনোযোগ দিয়ে তার কথা শোনো। তোমার খুব সামান্য সহানুভূতি বা মানসিক সাপোর্ট হয়তো তোমার বন্ধুকে যে কোনো ধরনের বড় বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে। 

আলোচনার সুযোগ রাখোঃ ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতেই পারে। তবে সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে বন্ধুত্ব নষ্ট করে ফেলো না! আলোচনার সুযোগ রাখো। বন্ধুরা মিলে একসাথে বসে আলোচনা করে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাও। 

‘For Granted’ মনে না করাঃ অন্য যে কোনো সম্পর্কের মতো একটি ভালো বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে অনেক সময় আর শ্রম দিতে হয়। যেমন- তোমার বন্ধু যেমন তোমার জন্য কিছু করবে ঠিক তেমনি তোমাকেও তার জন্য তার প্রয়োজনে কিছু করতে হবে। একদিক থেকে শুধু দেয়া বা নেয়া- এটা আসলে বন্ধুত্ব স্থায়ী করার পথে বাঁধা হিসেবে কাজ করবে।

বিশ্বস্ত বন্ধু হওঃ এটি কিন্তু ভালো বন্ধু হওয়ার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। তোমাকে অবশ্যই বিশ্বস্ত হতে হবে। তোমার বন্ধু যদি তোমাকে বিশ্বাস করে কোনো কথা বলে এবং গোপন রাখতে বলে তাহলে অবশ্যই তোমার উচিৎ হবে সেই বিষয়টি গোপন রাখা। 

বন্ধুত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওঃ হাসি-ঠাট্টার ছলেও এমন কোনো কথা বলো না বা এমন কোনো কাজ করো না, যাতে তোমার বন্ধু অপমানিত হয়, হীনমন্য হয় বা কষ্ট পায়। অনেক বন্ধুত্ব কিন্তু এজন্যই ভেঙে যায়।  

এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখলে তুমি অবশ্যই ভালো বন্ধু পাবে এবং সেই বন্ধুত্ব হয়তো টিকে থাকবে আজীবন! কে জানে, একদিন তোমাদের চমৎকার বন্ধুত্বের কথাই হয়তো মানুষের মুখে মুখে ঘুরবে! 

– মোস্তাফিজুর রহমান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *