কেমন ছিলো তারকাদের কৈশোর? (পর্ব ০১)

প্রিয় কিশোর-কিশোরী বন্ধুরা, তোমাদের নিশ্চয় জানতে করে তাোমাদের প্রিয় তারকাদের কৈশোর কেমন ছিলো?

সে কথা জানাতেই তোমাদের জন্য আমাদের এই আয়োজন। আমরা তোমাদের জানাবো তোমাদের প্রিয় তিন তারকার কৈশোর নিয়ে। 

আজ প্রথম পর্বে থাকছে সাকিব আল হাসানের কৈশোরের কথা। 

১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরা জেলায় কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা মাশরুর রেজা ও গৃহিণী শিরিন শারমিনের মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন সাকিব আল হাসান। 

সাকিবের শৈশব কেটেছে মাগুরাতে। 

শৈশবে টেপ টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতেন মাগুরায়। দৈনিক প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র’র বর্ণনা অনুসারে, “সাকিবের ক্রিকেট দক্ষতা ছিল অসাধারণ এবং গ্রাম-গ্রামান্তরে তাকে খেলার জন্য ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হত।”

এরকমই এক ম্যাচে সাকিব এক আম্পায়ারকে অভিভূত করেছিলেন যিনি পরবর্তীতে সাকিবকে ইসলামপুর পাড়া ক্লাব (মাগুরা ক্রিকেট লীগের একটি দল) এর সাথে অনুশীলন করার সুযোগ করে দেন। সাকিব তার স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও দ্রুতগতির বোলিং অব্যাহত রাখেন, সেই সাথে প্রথমবারের মত স্পিন বোলিং নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ও সফল হন। ফলস্বরূপ, ইসলামপুর দলে খেলার সুযোগ পান এবং প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন। সত্যিকারের ক্রিকেট বল দিয়ে এটাই ছিল তার প্রথম করা বল, এর আগ পর্যন্ত তিনি টেপড টেনিস বল দিয়েই খেলতেন। 

২০০২ সালে এক ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে সাকিব আল হাসান বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। 

বিকেএসপিতে সাকিব আল হাসানের রুমমেটদের একজন ইমরান হাসান পিন্টু। যিনি বাংলাদেশ জাতীয় হকি দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তিনি সাকিবের সঙ্গেই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভর্তি হন বিকেএসপিতে।

বিকেএসপির কিশোর সাকিবকে নিয়ে বলতে গিয়ে পিন্টু বলেন, “ও খুব সিনসিয়ার ছিল শুরু থেকেই। আমরা ট্রেনিংয়ের পর এসে খুব আড্ডা দিতাম। সেই আড্ডাগুলোতে ও খেলা নিয়েই গল্প করত বেশি।”

বিকেএসপিতে সাকিবের আরেকজন বন্ধু তৌহিদুল আলম সবুজ, যিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। সাকিবের বিষয়ে বলতে গিয়ে সবুজ বলেন, “ছোট বেলাতেই বুঝেছিলাম ও অনেক বড় খেলোয়াড় হবে। ওই যে বললাম না, সব সময়ই খেলা নিয়েই ভাবতো ও। এই যে লং টাইম খেলতেছে এসবের কারণও কিন্তু একটাই। খেলার প্রতি ওর অপরিসীম ভালোবাসা।”

সাকিব তখন কেমন ব্যাটসম্যান ছিলো, তোমরা জানো কি? তখনকার ব্যাটসম্যান সাকিবকে নিয়ে পিন্টু বলেন, “বিকেএসপিতে হোস্টেল ভিত্তিক একটা খেলা হতো। ওখানে ও ওপেনিং ব্যাট করত। ও বেশিক্ষণ হয়তো ক্রিজে থাকত না। কিন্তু ও ১০টা বল খেললে ওর রান থাকতো ৩০ বা ৩৫। খুব হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান ছিল ও।”

শুধু কি ক্রিকেট? সাকিব কিন্তু ফুটবলও খেলতেন! সবুজ বলেন, “প্রতি শুক্রবার রিক্রিয়েশন ম্যাচ হয়। এক ব্যাচের সঙ্গে আরেক ব্যাচের খেলা। একদিন ক্রিকেট, একদিন ফুটবল এমন…। ফুটবল খেলা যখন হতো তখন ও আমার জার্সি-প্যান্ট পরত। আমার জার্সি ছিল ১০ নম্বর। ফুটবল খেলা হলে ও আমাদের দলের ক্যাপ্টেন থাকত। ক্রিকেট খেলা হলে আবার আমাকে ক্যাপ্টেন থাকতে বলতো ও। পুরোটাই মজার একটা খেলা…।”

প্রিয় বন্ধুরা, সাকিব যে ছোটো বেলা থেকেই খেলার প্রতি অনেক বেশি সিরিয়াস ছিলেন, তা তো নিশ্চয় তোমরা তার দুই বন্ধুর কথায় বুঝতে পেরেছো। সাকিব যে খেলাটা উপভোগও করতেন, তা ও নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো? সাকিবের সিরিয়াসনেস এবং উপভোগ করার এই মন্ত্রই কিন্তু তাকে আজ বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার বানিয়েছে। 

তোমরা যারা ভবিষ্যতে সাকিবের মতো সফল হতে চাও, তারা অবশ্যই সাকিবের মতো কাজের প্রতি সিরিয়াস হবে এবং পাশাপাশি কাজটা উপভোগ করার মন্ত্র নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। সফলতা নিজ থেকেই তোমার হাতে ধরা দিবে! 
-শারমিন কবীর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *