শীতকাল ত্বকের জন্য একটি কঠিন সময়। আর্দ্রতার অভাবে এবং শুষ্ক বাতাসের কারণে এসময় ত্বকে জ্বালাপোড়া, পানিশূন্যতা এবং কিছু স্কিন প্রবলেম হতে পারে যেমন, একজিমা, ফাটা ঠোঁট, সোরিয়াসিস, রোসেসিয়া এবং অন্যান্য।
কিন্তু তোমার ত্বকের যত্নের সাধারণ রুটিনেই কিছু সহজ পরিবর্তন এনে ঠান্ডার সময় জুড়ে ত্বককে রাখতে পারবে নরম, মসৃণ এবং প্রাণবন্ত!
তাই চলো জেনে নেই শীতকালে ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে কিশোর-কিশোরীদের জন্য কিছু সহজ টিপসঃ
১. নিয়মিত ময়শ্চারাইজ করা
ময়েশ্চারাইজারে থাকা হাইড্রেটিং ও তৈলাক্ত উপাদানগুলো মুখ ধোয়ার সময় তোমার ত্বক থেকে হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে এনে তা ত্বকেই আটকে রাখতে সাহায্য করে। ত্বকে একটি সূরক্ষামূলক আবরণ তৈরী করে ঠান্ডা আবহাওয়ায় ত্বককে শুকিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।
তাই, গোসল শেষে বা মুখ ধোয়ার পরে, ত্বক শুকিয়ে নিয়ে অবশ্যই একটি ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয়, ক্রিম-টাইপ ময়েশ্চারাইজার লাগালে যেখানে গ্লিসারিন, প্রো-ভিটামিন বি৩, সেরামাইডস, স্কোয়ালিন ইত্যাদি উপাদান থাকবে।
তবে ক্রিমের তৈলাক্ত ভাব তোমার পছন্দ না হলে, হাইড্রেটিং লোশন বা জেলবেসড ক্রিমও ব্যবহার করতে পারবে। ঠোঁটে, হাতের তালুতে ও পায়ের পাতায় ক্র্যাকিং বা ফাঁটা প্রতিরোধে ভ্যাসলিনের মতো পেট্রোলিয়াম বেসড পণ্য ব্যবহার করতে হবে।
২. কুসুম-গরম পানি দিয়ে গোসল করা
শীতের সময় গরম পানি দিয়ে লম্বা সময় নিয়ে গোসল করতে হয়তো তোমাদের অনেকেরই ভালো লাগে। তবে, অনেক গরম পানি দিয়ে বেশীক্ষণ ধরে গোসল করলে তোমার ত্বকে প্রাকৃতিক ভাবে থাকা তেল চলে যেতে পারে। এটা তোমার ত্বককে আরো শুষ্ক ও রুক্ষ করে দিতে পারে।
তাই শীতকালে দিনে মাত্র একবার উষ্ণ বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করে গোসল করবে। রাতে ঘুমানোর পূর্বে মুখ ধোয়ার জন্য হাইড্রেটিং ক্লিনজার বা ফেস-ওয়াশ ব্যবহার করবে। সাধারণ ক্ষারযুক্ত সাবানের বদলে লো-পিএইচ সাবান বা হাইড্রেটিং বডি ওয়াশ এবং সাধারণ শ্যাম্পুর বদলে কন্ডিশনারযুক্ত বা নরিশিং শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত হবে।
৩. হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা
ইনডোর হিটার, র্যেডিয়েটরের গরম শীতের শুষ্ক বাতাসকে আরো শুষ্ক করে তুলতে পারে, যার ফলে ত্বক থেকে আদ্রতা উড়ে যায়। একটি হিউমিডিফায়ার বাতাসে আর্দ্রতা্র অভাব পূরণ করতে পারে এবং ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে।
বিশেষ করে, যাদের সোরায়েসিস বা একজিমা আছে, তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার সহায়ক হতে পারে।
ঘরে ইনডোর প্ল্যান্টস রাখা হিউমিডিফায়ারের সহজ ও সস্তা বিকল্প হতে পারে।
৪. হাইড্রেটেড থাকা
তোমার শরীরের অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রভাব ত্বকেও পড়বে। ত্বককে তাই ভিতর থেকে হাইড্রেটেড রাখতে পরিমাণমতো পানি ও অন্যান্য তরল গ্রহণ করতে হবে।
তবে, শীতে ঠান্ডার কবল থেকে দূরে থাকতে আমরা অনেকেই বেশী পরিমাণে চা-কফি পান করি। বেশী পরিমানে এসকল পানীয় গ্রহণ করলে এদের ডাই-ইউরেটিক বা মূত্র-বর্ধক বৈশিষ্ট্যের কারণে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে ত্বকও ডিহাইড্রেটেড থাকে।
৫. পুষ্টির দিকে নজর দেওয়া
সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ ত্বকও এর ব্যতিক্রম নয়। শীতকালীন রঙ্গিন শাকসবজি বিটা-ক্যারোটিন ও অন্যান্য উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এ ভরপুর। বাদাম, মিষ্টিকুমড়ার বীজ, চিয়াসিডস এবং ফ্যাটি-ফিশ যেমন- স্যালমন, টেংরা, ইলিশ, কড, চিংড়ি ইত্যাদিতে রয়েছে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
ত্বকের সুস্বাস্থ্যে এদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদ্গণ শীতকালীন ত্বকের যত্নে এসকল খাবার ডায়েটে রাখতে পরামর্শ দেন।
তো এই ছিল শীতের শুষ্কতা থেকে ত্বককে রক্ষা করতে করণীয় কিছু কাজ। মনে রাখবে ত্বকের যত্নে রুটিন মেইনটেইন করা বা নিয়মিত হওয়াই সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। এবং ত্বক নিয়ে এলার্জি, একজিমা ও অন্যান্য সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অবশ্যই ভুলবে না।
আশা করি এই লেখাটি তোমাদের ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারো। এরকরম আরো মজার মজার আইডিয়া জানতে এবং ব্লগ পড়তে ভিজিট করো the7teen.com