আমাদের সবচেয়ে কাছের মানুষের তালিকায় বাবা-মা সাধারণত থাকেন সবার উপরের দিকে। তারা আমাদের ভরসার জায়গা, আমাদের প্রথম বন্ধু। যারা আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
কিন্তু এরপরও দেখা যায় প্রায়ই বাবা-মায়ের সাথে মনোমালিন্য তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে। কিন্তু বাবা-মায়ের সাথে কি মন খারাপ করে থাকা যায়? তাই আজ বলব বাবা-মায়ের সাথে মনোমালিন্য ঠিক করার ৫ টি উপায়।
১. দেখার চেষ্টা করো তাদের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে
পৃথিবী খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বাবা-মায়ের শত ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় নতুন কিছুর ব্যপারে দেখা যায় তাঁদের কম আইডিয়া থাকে। হয়তো সন্তানের কোনো ভুল না থাকার পরও বাবা-মায়ের সাথে দ্বিমত তৈরি হয়। এতে অনেক সময় বাক-বিতণ্ডাও সৃষ্টি হয়।
একথা অনস্বীকার্য যে তারা সন্তানদের সকল ক্ষতি থেকে দূরে রাখতে চান। এটি মাথায় রাখলে এবং যেসব বিষয়ে তাদের ধারণা কম সেগুলো নিয়ে আলোচনায় আরো ধৈর্যশীল হলে অনেকক্ষেত্রেই বাবা-মায়ের সাথে মনোমালিন্য কমে যাবে।
২. ভুল স্বীকারে ভয় পেও না
কিশোর বয়স জীবনের একটি জটিল সময় যেখানে অনেক শারীরিক, মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক পরিবর্তন হয়। হরমোন, অনভিজ্ঞতা ও আবেগের বশে এসময় প্রায়ই এমন কিছু কাজ করে ফেলা হয় যা হয়তো উচিত না।
ভুল যতো ছোট বা বড় হোক, যদি বুঝতে পার কোনো কাজ করা তোমার ঠিক হয়নি, তা স্বীকার করতে ভয় পেও না। মনে রাখবে, বাবা-মা তোমার ভুল শোধরানোর চেষ্টা করেন।
তাই নিজের ভুল বুঝতে পেরে যদি অনুতপ্ত হও ও ক্ষমা চেয়ে নাও, তাহলে বৃথা তর্ক এড়ানো সম্ভব হবে।
৩. হোয়াটস্যাপ টেক্সটে বা মেসেজে জানাও তোমার অনুভূতি
আবেগপ্রবণ মুহুর্তে অনেক সময় আমরা ভুল কথা বলে ফেলি। নিজের অনুভূতি গুলো ঠিক ভাবে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হই। এখান থেকে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক সমস্যাই ভুল বোঝাবুঝি থেকে হতে পারে।
পিতা-মাতার সাথে এই ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে তুমি নিতে পারো চিঠির সাহায্য! যে কথা তুমি মুখে বলতে পারছ না তা লিখে জানাও টেক্সট বা মেসেজে। লিখে জানাতে পারো বাবা-মা’র প্রতি তোমার ভালোবাসা, প্রকাশ করতে পারো তোমার অনুভূতি, অথবা তাদের কথা শুনে চলার প্রতিশ্রুতি।
৪. জমানো টাকায় কিনে ফেল ফুল বা উপহার
মনোমালিন্য এড়ানোর অনেক চেষ্টার পরও বাবা-মায়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে? দুশ্চিন্তার কারণ নেই। এখন তোমার চেষ্টা করতে হবে কীভাবে তাদের মন ভালো করা যায়। একটা উপায় হতে পারে উপহার দেওয়া।
উপহার পেতে কার না ভালো লাগে? তোমার জমানো টাকায় কিনে দিতে পারো চকোলেট, ফুল বা তাদের পছন্দের কোনো কিছু। এছাড়াও উপহার হতে পারে বাগানের ফুল, হাতে বানানো স্যরি-কার্ড!
৫. রান্না বা ঘরের কাজটা করে চমকে দাও
বলা হয়ে থাকে, ‘অ্যাক্ট অব সার্ভিস’ ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে কার্যকরী মাধ্যম। এই অ্যাক্ট অব সার্ভিস এ থাকতে পারে ঘর গুছিয়ে, বাসার সহজ কিছু কাজ করে মা-বাবাকে সাহায্য করা।
যদি তুমি রান্না জানো তাহলে বাবা-মার জন্য তৈরি করতে পার মজাদার কিছু। অবিস থেকে ফিরলে বাবা-র মাথায় বিলি করে দিতে পারো, ম্যাসাজ করে দিতে পারো ক্লান্ত মায়ের কাঁধ।
তো এই ছিল বাবা-মায়ের সাথে মনোমালিন্য দূর করার উপায়। তোমার পরিবারে কোন পন্থাটি কার্যকর হবে সেটা বের করে নিতে হবে তোমাকেই।
পাশাপাশি বাবা-মাকেও সন্তানদের প্রচেষ্টায় সহানুভূতিশীল হতে হবে এবং সন্তানের পক্ষ থেকে কনফ্লিক্ট সমাধানের চেষ্টাকে স্বাগত জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাবা-মা ও সন্তান উভয়ের চেষ্টাতেই দূর হবে মনোমালিন্য।
-শারমিন কবীর