কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যা নিরসনে করণীয়

আঁচল ফাউন্ডেশনের একটি জরিপ থেকে জানা যায়, ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এদেশে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার সংখ্যা ৩৬১ জন। ২০২২ সালে যার সংখ্যা ছিল ৫৩২ জন। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১০১ জন।

জরিপ অনুসারে এই শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই কিশোর-কিশোরী। যা খুবই উদ্বেগজনক।

আত্মহত্যার কারণ

পারিবারিক অশান্তি, ব্যক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত এবং তা মেনে নিতে না পারা, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভোগা, মাদকে আসক্তি, একাকীত্ব – এই বিষয়গুলোই বেশিরভাগ সময় কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদের কী করণীয়:

আত্মহত্যা ঠেকাতে আমরা সকলেই নিজেদের জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে পারি। যেমন –

  • মানসিক অবসাদে ভুগছে এমন কিশোর-কিশোরীদের কথা শোনার চেষ্টা করতে হবে। কেউ তার কথা শুনছে – এইটুকুও অনেক সময় মানুষকে মানসিক শক্তি যোগায়।
  • কিশোর-কিশোরীদের খেলাধুলায় অংশ নিতে উৎসাহ দিতে হবে।
  • সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণ মানসিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। কিশোর-কিশোরীদের সৃজনশীল কাজে অংশ নিতে উৎসাহ দিতে হবে।
  • পারিবারিক পরিবেশ সব সময় সুন্দর রাখার চেষ্টা করতে হবে। কিশোর-কিশোরীদের যে কোনো প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে।
  • অভিভাবকদের উচিৎ সন্তানের বন্ধু হওয়া। এতে করে যে কোনো সমস্যা সন্তান সবার আগে তার বাবা-মায়ের সাথেই শেয়ার করবে।
  • সন্তানের সাথে কখনোই চিৎকার করা বা গায়ে হাত তোলার মতো কাজ করা যাবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতেই সন্তানের সাথে কথা বলতে হবে, আলোচনা করতে হবে, ধৈর্য নিয়ে সন্তানকে বোঝাতে হবে।
  • কোনো কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা প্রবণ বা আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে এমন হলে তাকে অবশ্যই মনরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
  • মিডিয়া সংশ্লিষ্টদের সচেতন হতে হবে আত্মহত্যার সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সংবাদগুলো যেন এমন না হয় যাতে কিশোর-কিশোরীরা প্রভাবিত হতে পারে।
  • আত্মহত্যা প্রতিরোধে কী করণীয় এবং আত্মহত্যা প্রবণ মানুষেরা কোথায় গেলে সাহায্য পেতে পারে, সেই বিষয়ে সংবাদ প্রচারে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে।

যে কোনো দেশ, সমাজ বা পরিবারের জন্য কিশোর-কিশোরীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের যত্ন নেওয়া আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। আত্মহত্যা কখনোই কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না, এটি কিশোর-কিশোরীদের বোঝাতে হবে। বোঝাতে হবে পরিবারে সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আবেগের বশে এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার নেওয়া উচিৎ নয় যেটি তার পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষকে কষ্ট দিবে।

প্রিয় কিশোর-কিশোরী বন্ধুরা, তোমাদেরও কিন্তু এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং তোমাদের মতো যারা আছে কিশোর-কিশোরী, তাদের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

শারমিন কবীর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *