টিনএজে শারীরিক, মানসিক ও জ্ঞানভিত্তিক স্কিল সমূহের ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম। কানাডিয়ান পেডিয়াট্রিক সোসাইটির এক গবেষকের মতে, টিনএজারদের গড়ে ৯ থেকে ১০ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন।
ঘুম প্রত্যেকটি মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, টিনএজে এর রয়েছে কিছু বিশেষ প্রয়োজন। এই বয়সে দৈহিক গঠন ও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম। তাই পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিতে আজ তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি কিছু গুরুত্বপূর্ণ গাইডলাইন।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাও
ভালো ঘুমের জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে বিছানায় যাও। এতে করে তোমার মস্তিষ্ক ঘুমের জন্য একটি নির্ধারিত সময়ে অভ্যস্ত হবে। এতে করে অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর হবে।
ঘুমের অন্তত ৩০ মিনিট আগে সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধ করো
মোবাইল ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার ও টিভি থেকে নির্গত হয় অত্যন্ত ক্ষতিকর একধরণের উজ্জ্বল আলো (Blue light) ও রেডিয়েশন যা তোমার ঘুমের ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটাতে পারে। তাই, ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে সকল ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকো।

সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকো
চা- কফি জাতীয় পানীয়তে রয়েছে ক্যাফেইন নামক একটি উপাদান, যা আমাদের ঘুমের ভাব দূর করে সতেজ থাকতে সাহায্য করে। বিখ্যাত রিসার্চ জার্নাল ScienceDirect এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় পান করার ফলে ব্যাহত হয় আমাদের স্বাভাবিক স্লিপ সাইকেল।
রাত জাগা পরিহার করো
রাতে দীর্ঘক্ষণ জেগে থাকা এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার ফলে ঘুমের কোয়ালিটি হ্রাস পায়। যার ফলে দিনে স্কুলে দুর্বল অনুভব হয় এবং সেইসাথে হ্রাস পায় মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পড়ালেখায়। কোনো কিছুতেই মনোযোগ দেওয়া যায় না। তাই, রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করো।
রাতে হালকা খাবার গ্রহন করো
রাতে ভারি খাবার পরিহার করা এবং সেইসাথে ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে ফেলা উচিত কেননা খাবার গ্রহণের সাথে সাথে আমাদের পরিপাকতন্ত্রের কার্যকলাপ শুরু হয়ে যায়। Cambridge University Press এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ঘুমানোর আগে খাবার গ্রহণের সাথে সরাসরি প্রভাব রয়েছে ঘুমের কোয়ালিটি এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময়ের ওপর। আবার খাবার গ্রহণের সাথে সাথে শুয়ে পড়ার কারণে ব্যাহত হয় আমাদের স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়া। যার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের ঘুমের ওপর।
প্রতিদিন ব্যায়াম করো
নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলার মাধ্যমে শরীরের প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি খরচ হয়, যার ফলে আমাদের দেহ ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং পুনরায় শক্তি সঞ্চয়ের প্রয়োজন হয়। যার ফলে রাতে ভালো ঘুম হয়। তাছাড়া, শারীরিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকার কারণে অনিদ্রাজনিত বহু সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
ঘুমানোর আগে কক্ষের আলো সীমিত করে নাও
উজ্জ্বল আলো থেকে আমাদের মস্তিষ্ক এক প্রকার অ্যালার্ট সিগন্যাল গ্রহন করে যার ফলে দিনের বেলায় আমাদের মস্তিষ্ক সজাগ থাকে। তাই বিজ্ঞানীরা বলেন ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর দ্রুত রুমের বাতি জ্বালিয়ে দিতে। তবে, রাতে ঘুমের জন্য চাই অন্ধকার বা সীমিত আলো।
এই টিপসগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে তুমি তোমার ঘুমের কোয়ালিটি এবং পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করতে পারো।
– মোঃ রাফসান তালুকদার
(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)