টিনএজ প্রেগনেন্সি বা কৈশোরকালীন গর্ভাবস্থা আমাদের উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি লজ্জাজনক অধ্যায়। যে টিনএজ বয়সটা সহপাঠীদের সাথে স্কুলে যাওয়ার, যে টিনএজ বয়সটা জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হওয়ার, সেই বয়সেই তাদের ওপর নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া।
এ এক বিশাল কর্মভার, যার ভারে প্রতিনিয়ত পিষ্ট হয় অসংখ্য কোমলমতি কিশোরী।
টিনএজ প্রেগনেন্সি কী?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)- এর মতে, টিনএজ প্রেগনেন্সি বলতে এমন একটি পরিস্থিতি বোঝায় যেখানে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী একজন কিশোরী গর্ভবতী হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টিনএজ প্রেগনেন্সিতে কিশোরী মায়েদের মৃত্যু ঝুঁকি : বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে ১৩-১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের মৃত্যুহার প্রতি ১০০০ এ ১.৭৩ শতাংশ যার প্রধান কারণ সন্তান জন্মদান ও গর্ভকালীন জটিলতা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ ২০২২ সালে করা পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাতৃ-মৃত্যুর অনুপাত প্রতি ১০০০ প্রসবে ১৫৬ জন, যা কিনা প্রসবকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী ৪২ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। যার অন্যতম প্রধান কারণ অল্প বয়সে গর্ভধারণ।
টিনএজ প্রেগনেন্সির প্রধান কিছু কারণ :
১. বাল্যবিবাহ : বাল্যবিবাহের কারণে ব্যাহত হয় কিশোরীদের স্বাভাবিক জীবনধারা। বন্ধ হয়ে যায় স্কুলে যাওয়া, শুরু করতে হয় সংসার জীবন। স্বামীর ইচ্ছায় বাধ্য হয়ে নিতে হয় অল্প বয়সে গর্ভধারণের মতো ভুল সিদ্ধান্ত।
২. শিক্ষার অভাব : শিক্ষার অভাবে পরিবার পরিকল্পনা কিংবা জন্মনিরোধকের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অজ্ঞতা থাকে বেশিরভাগ কিশোরী এবং তাদের অভিভাবকদের। এতে করে সৃষ্টি হয় কিশোরী বয়সে গর্ভধারণ, কিংবা প্রসব পরবর্তী বিরতিহীন গর্ভধারণের মতো বিপজ্জনক ঘটনা।
৩. দরিদ্রতা : দরিদ্র পিতা-মাতা তাদের দৈনন্দিন জীবনের খরচ এবং চাহিদা কমাতে তাদের কন্যা সন্তানদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। জীবনমানের অনুন্নয়ন, সীমিত আয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তথা দরিদ্রতা যার অন্যতম কারণ।
(পরবর্তী পর্বে আমরা তোমাদের জানাবো টিনএজ প্রেগনেন্সি নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কর্মসূচি এবং সুবিধা সমূহ, টিনএজ প্রেগনেন্সি নিরসনে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ক শিক্ষার গুরুত্ব, টিনএজ প্রেগনেন্সি নিরসনে একজন টিনএজার হিসেবে তোমার কী করণীয়)
– মোঃ রাফসান তালুকদার
(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)