পর্নঃ না জেনে নিজেই নিজের ক্ষতি করছো না তো?

পর্ন বা পর্নোগ্রাফি বলতে মূলত নারী-পুরুষের যৌন মিলনের আপত্তিকর ভিডিওকে বোঝায়। পর্ন সাধারণত বাস্তবের চাইতে অনেকটাই অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপিত করা হয়।

বিভিন্ন গবেষণা মতে পর্ন দেখা একটি আসক্তি। কারণ, পর্ন দেখার ফলে মস্তিষ্কে নিসৃত হয় ‘ডোপামিন’ নামক বিশেষ হরমোন। যার ফলে মস্তিষ্কে পর্যায়ক্রমে আরো বেশী পর্ন দেখার চাহিদার সৃষ্টি হতে থাকে এবং একটি সময় ‘ডিপেন্ডেন্সি’ লেভেলে পৌঁছে যায়। এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

এছাড়া পর্ন আসক্তির রয়েছে আরো অনেক ক্ষতিকর দিক। আজ তোমাদের পর্ন আসক্তির ফলে সৃষ্ট ক্ষতি সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানাবো।

লেখাপড়ায় পিছিয়ে যাওয়া

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হ্যালথ এ প্রকাশিত বেশ কয়েকটি গবেষণা পত্রের তথ্যানুযায়ী পর্ন আসক্তি আমাদের মস্তিষ্কের বিশেষ কিছু অংশ যেমন প্রিফ্রনটাল কর্টেক্স ( Prefrontal Cortex) এর ওপর প্রভাব ফেলে যা মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা ও নতুন কিছু শেখার প্রবণতাকে হ্রাস করার মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানান কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটায়। যেমন টিনএজের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটে লেখাপড়া ও নানান প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টের মধ্যে দিয়ে, এক্ষেত্রে পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য কিশোর-কিশোরী অভিযোগ করে পর্ন আসক্তির ফলে তারা লেখাপড়ায় অন্য সহপাঠীদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। এমনকি অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর পর্ন আসক্তির ফলে ইয়ার ড্রপ পর্যন্ত হয়।

নানাবিধ মানসিক রোগে ভোগা

ফ্রানসিসকান ইউনিভার্সিটি অব স্টিউবেনফিলের তিনজন গবেষক তাদের এক গবেষণায় একদল ছাত্র-ছাত্রীর ওপর করা সার্ভেতে জানতে পারেন যে পর্ন আসক্তির ফলে শতকরা ১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী বিষন্নতায় (Depression) ভুগছে এবং ২০.৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ভুগছে উদ্বেগ জনিত মানসিক সমস্যায় (Anxiety Disorder), এছাড়া তারা আরো জানতে পারেন যে শতকরা ১৩.৫ জন ছাত্র-ছাত্রী এই পর্ন আসক্তির প্রভাবে মানসিক চাপে (Stress) ভুগছে। 

যৌন স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি

মানব মস্তিষ্ক নিয়ে লেখা যুগান্তকারী বই “The Brain That Changes Itself” এর তথ্যানুযায়ী পর্ন আসক্তির ফলে Erectile Dysfunction এর মতো যৌন সমস্যার শিকার হচ্ছে পুরুষেরা। 

সোশ্যাল লাইফের ওপর প্রভাব

রিসার্চ জার্নাল কিউরিয়াসে প্রকাশিত পাকিস্তানের একদল চিকিৎসকের করা একা গবেষণার তথ্য অনুযায়ী পর্ন আসক্তি মানুষের সোশ্যাল লাইফকেও ব্যাপক ভাবে ক্ষতি করে। পর্ন আসক্তির ফলে একজন ব্যক্তি তার কর্মক্ষেত্রে ভীষণভাবে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকে। একটি পর্যায়ে সে সোশ্যাল স্টিগমার শিকার হয়।

সম্পর্কের টানাপোড়েন

দা ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা এর দুজন গবেষক তাদের একটি গবেষণায় দেখেন যে পর্ন আসক্তি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কারণ, দীর্ঘ সময় অবধি পর্ন দেখার ফলে সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ হ্রাস পায়। কারণ পর্নে আসক্ত ব্যক্তি ভার্চুয়াল অতিরঞ্জিত পর্ন কন্টেন্টের সাথে বাস্তবের সাদৃশ্য খুঁজে পায় না যার ফলে সে প্রতিনিয়ত হস্তমৈথুনের (Mustarbation) আশ্রয় নেয়। যার ফলে ক্রমান্বয়ে সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন হয় এবং সম্পর্কের ভাঙন ঘটে। আমেরিকান একাডেমি অব মেট্রোমনিয়াল লয়ার্সের তথ্যানুসারে আমেরিকায় শতকরা ৫৬ টি ডিভোর্সের পেছনে মূল কারণ পর্ন আসক্তি। 

এ থেকেই তোমরা ধারণা নিতে পারো পর্ন তোমাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তাই এর বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে নিজে জানার পাশাপাশি সতর্ক করতে পারো তোমার সহপাঠীদেরও।

– মোঃ রাফসান তালুকদার

(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *