পিরিয়ডে পেট ব্যথা, যা ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) নামেও পরিচিত। ব্যথাটি তলপেট থেকে শুরু হয়ে পিঠের নিচের দিকে বা ঊরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পিরিয়ডের ব্যথা ব্যক্তি বিশেষে হালকা থেকে তীব্র হতে পারে।
পিরিয়ডের এই ব্যথা কমানোর রয়েছে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি।
বিএমসি কমপ্লিনেন্টরি এন্ড অলটারনেটিভ মেডিসিন নামক রিসার্চ পাবলিকেশনে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রের তথ্যানুসারে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছের নির্যাস বা রস যেমন আদা, হলুদ, তাপ প্রয়োগ ও আকুপ্রেসার শরীরে প্রোস্টাগ্লেনডিনের পরিমাণ কমিয়ে ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লক করে এবং বিটা-এন্ডরফিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করার মাধ্যমে পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে আনে।
পিরিয়ডের সময় কেন ব্যথা হয়?
পিরিয়ডের ব্যথা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও এর রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ। প্রোল্যাকটিন নামক ফিমেইল হরমোন ডিম্বাশয়ের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। পিরিয়ডের সময় প্রোল্যাকটিনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে পিরিয়ডের ব্যথার সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি প্রোস্টাগ্ল্যানডিন নামক পদার্থ যা পিরিয়ডের সময় বৃদ্ধি পেয়ে জরায়ুকে সংকুচিত করে। এছাড়া পিরিয়ডের সময় জরায়ু এবং অ্যাবডোমিনাল পেশিগুলোর সংকোচন ব্যথার প্রধান কারণ।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়
গরম পানি : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রের তথ্যানুযায়ী, পিরিয়ডের সময় কুসুম কুসুম গরম পানি পান এবং গরম পানি দ্বারা গোসল করলে ব্যথার পরিমাণ কমে আসবে।
তাপ প্রয়োগ : ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক ২৩০২ জন নারীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখেন যে পিরিয়ডের ব্যথা নিরসনে কোনো প্রকার ট্রিটমেন্ট না নেওয়া নারীদের তুলনায় তলপেটে তাপ প্রয়োগকারী নারীদের ব্যথা অনেকাংশে কমে গিয়েছে। এক্ষেত্রে তুমি গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়ে তা তলপেটে পেঁচিয়ে নিয়ে গরম ভাপটি প্রয়োগ করতে পারো কিংবা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারো।
আদা : আদা একটি শক্তিশালী প্রদাহ বিরোধী এবং প্রাকৃতিক ব্যথানাশক। এতে বিদ্যমান ‘জিনজারল’ নামক উপাদানে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও এন্টি-ইনফ্লেমেটরি, যা তলপেটের পেশীসমূহের সংকোচন রোধে সহায়তা করে।
ব্যায়াম : পিরিয়ডের সময় তোমাদের মাঝে অনেকেই ব্যথার তীব্রতায় একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ো। তবে, ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী বিশেষ কিছু শারীরিক ব্যায়ামের রয়েছে পিরিয়ডের ব্যথা নিরসনের ক্ষমতা। তার মধ্যে মডারেট ইনটেনসিটি অ্যারোবিক এক্সারসাইজ অন্যতম।
এসেনশিয়াল অয়েল : বিভিন্ন ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল তলপেটে মালিশ করার ফলে কমতে পারে পিরিয়ডের ব্যথা। সিনামন অয়েল, ক্লোভ অয়েল, পেপারমিন্ট অয়েল, লেভেন্ডার অয়েল এইসব এসেনশিয়াল অয়েলে থাকা এরোমাথেরাপি প্রোপার্টিজ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর পাশাপাশি স্ট্রেস ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড : ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনোকোলজি এন্ড অবসটেট্রিক্সের প্রকাশিত এক গবেষণায়, ৯৫ জন নারীর ওপর করা এক গবেষণায় দেখা যায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড গ্রহণকারী নারীদের পিরিয়ডের ব্যথার পরিমাণ অনেকটাই কমে আসে। যা মূলত হয়ে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে বিদ্যমান এন্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজের কারণে।
এই টিপসগুলো পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে অনুসরন করতে পারো। আশা করি তোমরা সুফল পাবে।
– মোঃ রাফসান তালুকদার
(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)