বয়ঃসন্ধিতে মানসিক পরিবর্তন

বয়ঃসন্ধি শব্দটির সাথে তোমরা সবাই পরিচিত নিশ্চয়? 

আচ্ছা, সহজ করে দিচ্ছি। 

জন্মগ্রহনের পর একজন মানুষকে শৈশব ও যৌবন, এই দুই ধাপের মাঝে আরো একটি ধাপ পার করতে হয়। কী সেই ধাপ? কৈশোর! এই ধাপকেই বলা হয় বয়ঃসন্ধি, ইংরেজিতে যাকে বলে Puberty(পিউবার্টি )। আর তোমাদের বলা হয় কিশোর-কিশোরী (Teenager)। 

নিশ্চয় তোমার মনে প্রশ্ন জাগছে, সবই বুঝলাম কিন্তু কোন বয়সীদের কিশোর-কিশোরী বা টিনএজার বলা হবে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization – WHO) মতে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়স যাদের, তাদেরকেই কিশোর-কিশোরী বা টিনএজার বলা হবে। অর্থাৎ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ১০ থেকে ১৯ বছরের এই সময়টায় বয়ঃসন্ধিকাল। 

এই সময়ে তোমার শারীরক ও মানসিক অনেক পরিবর্তন ঘটে, তুমি কী জানো? আগের পর্বে আমরা শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে কথা বলেছি। আজ কথা বলবো মানসিক পরিবর্তন নিয়ে।  

মানসিক পরিবর্তন 

আবেগঃ শরীরের হরমোনাল এক্টিভিটির কারণে এই সময়ে আবেগ বা ইমোশনের বেশ তারতম্য ঘটে। হঠাৎ রেগে যাওয়া, বিষণ্ণ অনুভব করা, কোনো কারণ ছাড়াই মন খারাপ হয়ে যাওয়া বা কান্না করা, এমন বেশ কিছু বিষয় তোমার সাথে ঘটতে পারে। এর জন্য নিজের উপর অভিমান করা বা বিরক্ত হবে না। পৃথিবীর সব মানুষ, যারা বয়ঃসন্ধি পার করেছে তাদের সবার ক্ষেত্রেই এমন ঘটেছে। তুমি যেটি করতে পারো, সেটি হলো নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা। 

চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তনঃ চিন্তা-ভাবনার বেশ বড়ো একটি পরিবর্তন ঘটে এই সময়ে। যে কোনো বিষয়ে নিজের মতামত জানাতে ইচ্ছে করে। কারণ কি জানো? কারণ বয়ঃসন্ধিতে তোমার মানসিক পরিপক্কতা শুরু হয়।

রোমান্টিক অনুভূতিঃ এই সময়ে স্বাভাবিক ভাবেই ছেলেরা মেয়েদের ক্ষেত্রে এবং মেয়েরা ছেলেদের ক্ষেত্রে আকর্ষণ অনুভব করা। কোনো ছেলে বা মেয়েকে দেখে তীব্র ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে। এই বয়সে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমাকে অবশ্যই যে বিষয়টি খেয়াল করতে হবে, এই বয়সে আবেগের উপর তোমার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় বা তোমার পরিপূর্ণ মানসিক পরিপক্কতা না থাকায় তুমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যে কোনো একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে পারো। যার জন্য হয়তো আজীবন তোমাকে কষ্ট পেতে হবে। তাই ভালো লাগার অনুভূতি থেকেই সরাসরি কোনো সিদ্ধান্তে না গিয়ে তোমার এই অনুভূতি পরিবারের কারো সাথে শেয়ার করতে পারো। আর পরিবারের সদস্যদের জন্য পরামর্শ, আপনার রাগারাগি না করে এই বয়সী ছেলে মেয়েদের কথা শুনুন, তাদের জন্য কোনটি ভালো সেই পরামর্শ দিন। 

আরো কিছু পরিবর্তনঃ পরিবারের সদস্যদের থেকে বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে বেশি ভালো লাগে, কখনো আবার একা থাকতে বেশি ভালো লাগে, বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ নিতে ইচ্ছে হয়, নিজের মতামত প্রতিষ্ঠিত করার আকাঙ্ক্ষা জাগে, অন্যের থেকে নিজেকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করতে ইচ্ছে করে। 

এগুলো সবই এই বয়সের স্বাভাবিক পরিবর্তন। এমন কোনো পরিবর্তন তোমার মাঝে এলে ভয় না পেয়ে, উদ্বিগ্ন না হয়ে বা দুঃশ্চিন্তা না করে তোমার পরিবারের সাথে শেয়ার করো। পরামর্শ চাও। তারা নিশ্চয় তোমার পাশে থেকে তোমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই সময়টাতে তোমাকে সাহায্য করবে, সাপোর্ট দেবে। আর পরিবারের অন্য সদস্যদের বলবো, আপনার পরিবারের যে সদস্যটি বঃসন্ধিকালে আছে, তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তার কথা শুনুন। রাগ বা বকা দিয়ে নয়, আপনি ওর সাথে একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমেই ওকে বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। এর ফলে আপনার পরিবারের এই কিশোর বা কিশোরীটি পাবে একটি সুন্দর কৈশোর।  

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *