ভিকটিম ব্লেমিংঃ সমাজের এক অন্ধকার অধ্যায়

তোমাদের যদি সহজ করে বলি, তাহলে ভিকটিম ব্লেমিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে কোনো খারাপ কাজের জন্য অপরাধীকে দোষারোপ না করে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা হয়।

ভেবে দেখো তো, এমন কোনো ঘটনা তোমার মনে পড়ে কি না!

একটু চিন্তা করলেই দেখবে, এমন অনেক ঘটনা আমাদের আশেপাশে ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভিকটিম ব্লেমিং

বাংলাদেশে ভিকটিম ব্লেমিং এর মাত্রা কতটুকু তা বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কমেন্ট বক্সগুলো দেখলেই বোঝা যায়। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে সারা দেশে ২০২১ সালে ধর্ষণের স্বীকার হয়েছিল ১৩২১ জন নারী, সর্বশেষ তথ্য মতে ২০২২ সালে প্রথম ৬ মাসে ধর্ষণের স্বীকার হয় ৫৬৪ জন নারী ও মেয়ে শিশু।
তবে, ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী সহিংসতার স্বীকার হওয়া সত্ত্বেও আইনের আশ্রয় নেয় না কেবল সমাজের ভিক্টিম ব্লেমিং কালচারের ভয়ে।
তারা মনে করে, সহিংসতার কথা প্রকাশ পেলে তাদের উপর সামাজিক ভাবে নেমে আসবে নিন্দার ঝড়।

ভিকটিম ব্লেমিং এর নেতিবাচক প্রভাব

ভিকটিম ব্লেমিং এর ফলে সবচাইতে বেশি যে বিষয়টি ঘটে থাকে তা হলো আত্মহত্যা বা সুইসাইড। বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের করা এক সমীক্ষায় দেখা যায় ২০২২ সালে আত্মহত্যাকারী ৪০৫ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৭৬ শতাংশই টিনএজার! এখানের একটা অংশ রয়েছে যারা ভিক্টিম ব্লেমিংয়ের শিকার হওয়ার ভয়ে সুইসাইড করেছে। এছাড়া আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, সব সময় ভয় কাজ করা, নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা তৈরি হয়।

ভিকটিম ব্লেমিং রোধে তোমাদের করণীয়

কোনো দুর্ঘটনার স্বীকার ভিক্টিমের মানসিক অবস্থা থাকে ভঙ্গুর। চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় যাকে বলে ‘মেন্টাল ট্রমা বা সাইকোলজিক্যাল শক’। তাই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকো।
যখন কোন ভুক্তভোগী তার অভিজ্ঞতার কথা জানাবে তখন মন দিয়ে তার কথা শোনো এবং কোনো প্রকার মনগড়া যুক্তি কিংবা অনুমান নির্ভর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকো। সংবেদনশীল এই বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার আগে সাবধানে শব্দ ব্যবহার করো।
এমন ভাষা ব্যবহার করো যা অপরাধীর বিচার এবং ভুক্তভোগীর প্রতি সমর্থন যোগায়। তাদের বলো, ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি এবং আমি তোমার পাশে আছি’।
এই ধরনের কথা গুলো ভিক্টিমকে সাহস যোগাবে। সামাজিক মাধ্যমে কোনো ভিক্টিম ব্লেমিং হতে দেখলে তার প্রতিবাদ জানাও।

ভিকটিম ব্লেমিং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে একটি সহানুভূতিশীল, সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার জন্য এখন থেকেই শুরু হোক প্রতিবাদ এবং সচেতনতা তৈরির কাজ। তোমরাও এগিয়ে এসো নিজ নিজ অবস্থান থেকে।

– মোঃ রাফসান তালুকদার

(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *