মানসিক সুস্বাস্থ্যে পুষ্টিকর খাদ্যের প্রভাব!

সুস্বাস্থ্য কী? 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)- এর মতে, সুস্বাস্থ্য বলতে শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতাকে বোঝায় না, বরং শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতার সম্মিলিত উপস্থিতিকে সুস্বাস্থ্য বলে। তাই শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি। আর মানসিক সুস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে পুষ্টিকর খাবার। 

বিজ্ঞান কি বলে?

আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় অন্ত্র ও পাকস্থলিকে বলা হয় দ্বিতীয় মস্তিষ্ক! শুনতে অদ্ভুত লাগছে তাই তো? আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের পাকস্থলীতে বসবাস করে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ার, যাদের তৈরি কিছু বিশেষ ধরনের হরমোন প্রতিনিয়ত পরিপাকতন্ত্র হতে মস্তিষ্কে বার্তা প্রেরণ করে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডোপামিন এবং সেরোটোনিন। ডোপামিনের আরেক নাম ‘হ্যাপি হরমোন’, যার উপস্থিতিতে মানুষের মুড ভালো থাকে, আনন্দ অনুভূত হয়। অন্যদিকে সেরোটোনিন হচ্ছে মস্তিষ্কের নিউরন সংযোগকারী ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে, নিউরনসমূহের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বার্তা প্রদান করে বৃদ্ধি করে মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি ও সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে বৃদ্ধি পায় এইসব উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা। অপরদিকে অপুষ্টিকর ও অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে বৃদ্ধি পায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা, যার ফলে সৃষ্টি হয় মুড সুইং, হতাশা ও ডিপ্রেশনের মতো সমস্যা।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড : বিখ্যাত রিসার্চ পাবলিকেশন পাবমেড এর তথ্যানুসারে, মানসিক সুস্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সবচাইতে উপকারী হিসেবে সুপরিচিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। মানসিক অবসাদ ও হতাশা নিরসন, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় শিশুর মস্তিষ্কের গঠন, জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি, নানান ধরনের মানসিক রোগ যেমন সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসরডার নিরসনে এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের তেল যেমন কড লিভার অয়েল, সেলমন, টুনা এবং বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন চিয়া সিড, তোকমা ও আখরোট বাদাম ইত্যাদি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের প্রধান উৎস।

প্রোবায়োটিকস : ফ্রনটিয়ার্স জার্নালের তথ্যানুসারে প্রোবায়োটিক মানুষের মস্তিষ্কের জন্য একটি উপকারী উপাদান। এটি পরিপাকতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া সমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি করে যা গামা-এমিনোবিটারিক এসিড, প্রোপিওনিক এসিড, সেরোটিনিন এবং ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধির মাধ্যমে অবসাদজনিত সমস্যা নিরসনের পাশাপাশি মস্তিষ্কে আনন্দদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি করে, যার ফলে মানুষ মানসিকভাবে হাসি-খুশি ও ফুরফুরে মেজাজের অধিকারী হয়। বিভিন্ন ধরনের ফারমেন্টেড ডেইরি প্রোডাক্ট যেমন, দই, বাটার মিল্ক, পনির, মাঠা এবং বিভিন্ন ধরনের আচার, টোফু, কামবুচা, কিমচি প্রোবায়োটিকের প্রধান উৎস। 

অ্যামিনো এসিড : অ্যামিনো এসিড মস্তিষ্কের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। যার একটি প্রধান উৎস বিভিন্ন ধরনের বাদাম। ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন জার্নালের এক গবেষণার তথ্যানুসারে, প্রতিদিন ৩০ গ্রাম বাদাম খেলে মানসিক অবসাদের পরিমাণ ১৭% পর্যন্ত কমে আসে। বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যামিনো এসিড যা মানুষের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ, ডিমেনশিয়া (স্মৃতিশক্তি লোপ) ও অবসাদ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এছাড়া মাছ, মাংস, দুধ, মাশরুম ও মটরশুঁটি অ্যামিনো এসিডের অন্যতম উৎস।

সবুজ শাক-সবজি : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণ এন্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার, ফোলেইট, এসকরবিক এসিড, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন-কে বিদ্যমান। যা রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বভাবিক  রাখার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিকভাবেও চাঙ্গা রাখে।   

ফলমূল : একেক ফলে রয়েছে একেক ধরনের ভিটামিন যা আমাদের শরীরের মেক্রো ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস এর চাহিদা পুরন করার মাধ্যমে শরীর ও মনকে রাখে সতেজ ও ফুরফুরে। 

তাই তোমার মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণে এখন থেকেই মনোযোগী হও। 

মোঃ রাফসান তালুকদার

(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *