শিশুশ্রম সমাজের অন্ধকার একটি অধ্যায়। যার ফলে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে হাজারো শিশুর ভবিষ্যৎ।
সচেতনতার অভাবে বেড়ে চলেছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। দরিদ্রতা এবং আইনের শিথিলতা যার অন্যতম কারণ।
তাই শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে তোমার, আমার এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের।
শিশুশ্রম কী?
আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (ILO) এর মতে, ‘যে কোনো ধরনের শ্রমমূলক কাজে শিশুদের ব্যবহার যা তাদের শৈশবের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে এবং তাদের শিক্ষার্জনের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাই শিশুশ্রম’।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশুশ্রম
ইউনিসেফ,আইএলও ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের মতে, যাদের বয়স ১২ বছরের কম এবং যাদের সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয় তারাই শিশু শ্রমিক। ২০২২ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শিশুশ্রম জরিপে দেখা যায় দেশে শ্রমজীবী শিশুর সংখ্যা ৩,৫৩৬,৯২৭ জন। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ১,০৬৮,২১২ জন।
সেভ দা চিলড্রেন এর সমীক্ষা অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি ৬ জন শিশুর মধ্যে একজন কোনো না কোনো ধরনের উপার্জনমুখী কাজের সাথে নিয়োজিত।
শিশুশ্রম নিরসনে তোমাদের করণীয়
শিশুশ্রম নিরসনের কার্যকরী পন্থা হলো সচেতনতা তৈরি। তোমার এলাকার শিশুশ্রমিকদের অভিভাবককে জানাতে পারো শিশুশ্রমের বর্তমান ও সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর দিক। এর পাশাপাশি তাদের জানাতে পারো, শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত কর্মসূচি এবং সুবিধা সমূহ। যেমন – শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের নগদ অর্থ প্রদান, বৃত্তি , বিনামূল্যে বই ও ইউনিফর্ম প্রদান সম্পর্কে।
এসব সেবার খবর প্রচার করার মাধ্যমে দরিদ্র অভিভাবকগণের মাঝে সৃষ্টি হবে সচেতনতা যাতে করে অসংখ্য শিশু ফিরে আসতে পারবে সামাজিক সুরক্ষার আওতায়।
এর পাশাপাশি তোমার এলাকার শিশুশ্রমিক নিয়োগকারীদের সচেতন করতে শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের প্রণীত আইন ও নীতিমালা সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে পারো। নীতিমালাগুলো হলো –
১. জাতীয় শিশুশ্রম নির্মূল নীতি ২০১০
২.জাতীয় শিশুশ্রম কর্মপরিকল্পনা (২০১২-১৬)
৩.জাতীয় শিক্ষা নীতি
৪.সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০১৬-২০)
সচেতনতা তৈরির গুরুত্ব
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফের মতে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে শিশুদের দিয়ে অতি অল্প খরচে কাজ করানো যায় এবং সচেতনতার অভাবে দরিদ্র অভিভাবকেরা মৌলিক চাহিদার অর্থ যোগানে তাদের শিশুদের স্কুলে না পাঠিয়ে এই নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে কাজে নামিয়ে দেয়। এর ফলে শিশুর ভবিষ্যৎ হতে পরে অনিশ্চিত। আর শিশুদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত মানে একটি দেশের ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হবে।
তাই, শিশুশ্রম নিরসনে সমাজের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। সচেতনতা তৈরি করতে হবে। আর এই সচেতনতা তৈরিতে খুব গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারো তোমরা, টিনএজাররা।
– মোঃ রাফসান তালুকদার
(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)