অনলাইনে তোমার পজিটিভ উপস্থিতি নিশ্চিত করবে কীভাবে?

তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় দীর্ঘ একটি অংশ কিন্তু কেটে যায় অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোয়। বর্তমানে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মক্ষেত্র এবং অর্জন সমূহের একটি ডিজিটাল রিসিউম হিসেবে কাজ করে অনলাইন প্রোফাইল সমূহ। তাই অনলাইনে একটি পজিটিভ ইমেজ তৈরি করা আজকের দিনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারই আলোকে আজ তোমাদের জন্যে থাকছে বিশেষ কিছু গাইডলাইন।

প্রথমে জ্ঞান অর্জন করো : অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো সম্পর্কে প্রথমে জ্ঞান অর্জন করো। কোন প্ল্যাটফর্মের কাজ কি, কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়, এবং কোন ধরনের ব্যক্তি এখানে উপস্থিত থাকে এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করো। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের রয়েছে কিছু ব্যক্তিগত নীতি ও শর্তাবলি যা প্রায়ই টার্ম এন্ড কন্ডিশন নামে আমাদের সামনে আসে, চেষ্টা করো সেগুলো পড়ার এবং মেনে চলার। 

নেগেটিভ কিছু পোস্ট করা থেকে বিরত থাকো: আজকের দিনে আমরা আমাদের ডেইলি লাইফের প্রতিটি বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে থাকি। মন ভালো হোক কিংবা খারাপ, কোনো বিষয়ে আমরা একমত হই কিংবা না হই, এর বহিঃপ্রকাশ আমরা সবার আগে এইসব প্লাটফর্মেই করে থাকি। তবে, নেতিবাচক কোনো পোস্ট কিংবা মন্তব্য করার আগে চিন্তা করা প্রয়োজন এর দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত, সামাজিক, কিংবা ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত আসতে পারে কিনা। 

কোনো খবর শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করে নাও:  সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন মতাদর্শের ব্যবহারকারী। তাদের প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন, সেই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অনলাইনে প্রতিনিয়ত পোস্ট করা হয় বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট। তাই নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর প্রকাশিত কোনো স্ট্যাটাস ছবি কিংবা ভিডিও শেয়ার করার আগে ব্যক্তিগত ভাবে সেই বিষয়টির সত্যতা এবং যথার্থতা যাচাই করে নাও। এতে করে তুমি থাকবে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি হতে নিরাপদ। 

অনলাইন নেভিগেশনের সময় সীমা মেনে চলো: কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ করলে একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য হারিয়ে যাওয়া অত্যন্ত সহজ। একের পর এক বিনোদনমূলক কন্টেন্ট আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক হরমোনের নিঃসরণ করে যার ফলে আমরা এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ি এবং এর কারণে পারিপার্শ্বিকতা এবং সময়ের কোনো হিসেব আমাদের থাকেনা। তাই, সোশ্যাল মিডিয়া নেভিগেশন হতে হবে পরিমিত এবং যথার্থ। 

ব্যক্তিগত দক্ষতা, পারদর্শিতা এবং অর্জনসমূহ তুলে ধরো: বর্তমান তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটে আমাদের প্রত্যেকের একটি ব্যক্তিগত পরিচয় তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের দক্ষতা, পারদর্শিতা এবং অর্জন সমূহ সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রফেশনাল প্লাটফর্মে উপস্থাপন করার রয়েছে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক। অনলাইন প্লাটফর্মগুলোয় পজিটিভ ও সফল ব্যক্তিদের সাথে কানেকশন তৈরি করা বর্তমান প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রাখার একটি অনন্য মাধ্যম। তাই তোমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট সমূহ রাখো নিয়মিত আপডেটেড।

তোমার প্রকৃত পরিচয় ব্যবহার করো: অনলাইনে সর্বদা নিজ পরিচয় ব্যবহার করা উচিত। এর মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব। তাছাড়া বর্তমানে অনলাইন প্লাটফর্মগুলোর নিরাপত্তা কেন্দ্রিক বেশ কিছু আপডেটের কারণে প্রকৃত পরিচয়হীন একাউন্ট সমূহ বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যকর অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিতে সর্বদা নিজের ছবি এবং পরিচয় ব্যবহার করো।

ফ্রেন্ডলিস্টে বাবা-মাকে রাখো: সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর ফ্রেন্ডলিস্টে অভিভাবকদের উপস্থিতি আমাদের অনলাইন নেভিগেশনকে করে তোলে নিরাপদ এবং সু-নিয়ন্ত্রিত। এর মাধ্যমে অফলাইনের পাশাপাশি তাদের এবং আমাদের মাঝে তৈরি হয় একটি অনলাইন কানেকশন যার দ্বারা আমাদের অনলাইন উপস্থিতি হয়ে ওঠে আরো বেশি অর্থবহ এবং আনন্দদায়ক। তাছাড়া এর মাধ্যমে তাদের সাথে আমাদের তৈরি হতে পারে ফোন কলের পাশাপাশি কমিউনিকেশনের নতুন কিছু মাধ্যম।

এইসকল গাইডলাইন মেনে চলার মাধ্যমে তুমিও পারো তোমার অনলাইন উপস্থিতিকে পজিটিভ এবং প্রোডাক্টিভ উপায়ে গড়ে তুলতে।

– মোঃ রাফসান তালুকদার

(রিসার্চার, মেডিক্যাল প্রফেশনাল)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *