আমাদের সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ায় অনেক মানুষ। অনেক সময় দেখা যায় বিশ্বাস করে যাকে তুমি সব কিছু বলছো, সে তোমার এসব তথ্য নিয়ে তোমাকেই ব্ল্যাকমেইল করছে!
ব্ল্যাকমেইল আসলে কী সেটা আমরা মোটামুটি সবাই জানি।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, তোমার ব্যক্তিগত এমন কোনো তথ্য বা ছবি যদি কারো কাছে থাকে, যেটি প্রকাশ পেলে তোমার সামাজিক মান মর্যাদা হানি হতে পার, এবং সেটি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে কেউ তোমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করাতে চায়, সেটা ব্ল্যাকমেইল।
এই পরিস্থিতিতে ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক, তবে তোমাকে শক্ত থাকতে হবে। যদি তুমি এই ধরণের পরিস্থিতিতে পড়ো, তবে নিজেকে রক্ষা করতে তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেয়া খুবই জরুরি।
চলো দেখে নেওয়া যাক, ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে কীভাবে তুমি তা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারো।
প্রথমত, এমন কোনো ঘটনার শিকার হলে যে কাজটি তোমার সর্বপ্রথম করণীয় তা হল ঘাবড়ে না যাওয়া। মনে রাখতে হবে তুমি অপরাধী নও, ভিকটিম।
দ্বিতীয়ত, দ্রুত পরিবারের বড়োদের জানানোর চেষ্টা করবে। মনে রাখবে সবার আগে পরিবার। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভিকটিম এসব ঘটনা পরিবারকে জানাতে চায় না। কিন্তু দুঃসময়ে তোমার পরিবারই তোমার বড়ো ভরসা। তারা হয়তো তোমার ভুলের কারণে কষ্ট পাবেন, কিন্তু তারাই তোমার পাশে থাকবেন।
![](https://the7teen.com/wp-content/uploads/2024/03/A.6-1024x858.png)
তৃতীয়ত, ব্ল্যাকমেইলিং স্বাভাবিক ভাবেই মানসিক চাপের সৃষ্টি করে । তবে ব্ল্যাকমেইলারকে তা বুঝতে দেওয়া যাবে না। তাতে সে তোমার উপর আরো চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। তাই তোমাকেও সাহস বজায় রেখে তার সাথে কথা বলতে হবে।
চতুর্থত, প্রমাণ হিসেবে অপরাধের স্ক্রিনশট, লিঙ্ক, ছবি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। ঘটনাটি পুলিশ বিভাগের সাইবার ইউনিটে জানাতে পারো। ই-মেইলে অভিযোগ জানাতে পারো cyberhelp@dmp.gov.bd এই ঠিকানায়। প্রয়োজনে থানায় জিডি বা এফআইআর করতে পারো।
ইন্টারনেট/ফেসবুক-এর মাধ্যমে কেউ যদি তোমার ক্ষতি করতে চায়, তাহলে ICT (Amendment) Act-2013, ৫৭ অনুচ্ছেদ (কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করে, যা রাষ্ট্র বা কোনো ব্যক্তির ভাবমূর্তি বা ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত দেয়, তাহলে অপরাধীকে সর্বাধিক ১৪ বছরের এবং সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে) অনুসারে তার বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ রয়েছে তোমার।
নারীদের সহায়তা করার জন্য পুলিশের স্পেশাল সাপোর্ট সেন্টার ‘Police Cyber Support for Women’। তাদের সাথে ০১৩২০০০০৮৮৮ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারো। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ হেল্পলাইন নাম্বার ১০৯ এ কল করতে পারো।
মনে রাখতে হবে যত দ্রুত অপরাধীকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হবে, সঠিক বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। মনের জোর হারানো যাবে না। দেশের আইন তোমার পাশে আছে। ঠুনকো সামাজিক সম্মানের ভয়ে নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে না।
সাহস করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখতে হবে তোমাকে।
একই সাথে মনে রাখতে হবে, এমন কোনো কাজ পরবর্তীতে করা যাবে না, যা তোমাকে আবার এই অবস্থার মুখোমুখি করতে পারে।
– জেবুন্নাহার জেবা