আমার কন্যার ছবি আঁকতে ভালো লাগে। তবে টিভি দেখা, ইন্টারনেট গেমসের জন্যে ছবি আঁকায় তেমন আগ্রহ নেই। স্কুলের সিলেবাসের ছবিও পরীক্ষার আগের দিন আঁকে এমন অবস্থা।
এরপর আমি তাকে এটা আঁকো তো দেখি বলা, বিভিন্ন কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করানোর চেষ্টা, খুব প্রশংসা করা, নতুন রঙ কিনে দেয়া ইত্যাদি করে ফেল করলাম।
তার ঐ গা-ছাড়া ভাব।
আচ্ছা পরে আঁকবো, এখন থাক ইত্যাদি করে আমাকে বোকা বানিয়ে ঠিক মাইন ক্রাফটে ঘর বানাতে থাকলো।
ঘর বানানোর আগ্রহ দেখে কিনে দিলাম ঘর বানানোর লেগো সেট। কিচেন সেট। এবারো আমি ফেল।
এরপর আমি নিজেই ছবি আঁকা শিখতে শুরু করলাম। সাথে ওকেও নিয়ে যেতে লাগলাম। ভীষণ বিরক্ত হয়ে ক্লাস করলেও এক দুই সপ্তাহ পরে সে খুব আগ্রহী হল এবং এখন সে টিভি দেখতে বসলেও আগে আঁকার বোর্ড রঙ নিয়ে বসে।
ছবি আঁকতে যেয়ে দেখি কী সব অদ্ভুত সুন্দর সুন্দর সব রঙ, কালার পেন্সিল, সাইনপেন! সব মনে হয় কিনে ফেলি।
ওহ! ভালো কথা, এসব আমি কিনতে যাই আমার বাচ্চাদের সাথে নিয়ে। ওরা দেখে আগ্রহী হলে কিনে দেই।
এবার আমার মতো সব্বাই যে ছবি আঁকা শিখতে চলে যাবেন বা এই পদ্ধতি অবলম্বন করলেই আপনার বাচ্চা আগ্রহী হবে, এটা ভুলেও ভাববেন না। প্রতিটি বাচ্চা আলাদা। তাদের বড় করে তোলার ধরণও আলাদা। তবে ভালো কিছু করতে লেগে থাকার কোনো বিকল্প নেই।
আমার মেয়ে বেশ শান্ত আর আমার বাধ্য। প্রায় সবার সন্তানই তেমন। তবে কিছু কিছু বাচ্চা থাকে জেদী। আর সেই জেদের জন্যে ওদের আচরণে এমন উগ্রতা আসে।
আমি সব বাবা-মা যারা এই লেখা পড়ছেন, এবং বাড়ন্ত কিশোর কিশোরী সবাই কে বলতে চাই, একটু ধৈর্য্য সব কাজেই ভীষণ প্রয়োজনীয়। মা বাবা যখন বলছে, এটা দরকার। একবার করেই দেখো না, কেমন লাগে। আর বাবা মায়েদের বলবো, সব কিছু সবার ভালো লাগবে না। তাই সন্তানের ভালো লাগা জেনে তাকে প্রাধান্য দিন।
– মুসাররাত নাজ
(একজন টিনএজার কন্যার মা)