সন্তানকে ডিভাইস আসক্তি থেকে মুক্ত করার চেষ্টা (পর্ব ০১)

আমার কন্যা নীলাঞ্জনার বয়স ১২ বছর ৭ মাস।

অন্য সব বাচ্চার মতো আমার মেয়েও ভীষণ ভাবে মোবাইল,ট্যাব, টিভি আসক্ত। এজন্য অবশ্য আমি নিজেই দায়ী। কারণ একা থাকার একঘেয়েমি কাটাতে, আমার কাজের সময়, রান্নার সময় বা রেস্ট নেয়ার সময়ে ওকে আমি নিজেই ফোন, ট্যাব, টিভি দিয়েছি।

তবে স্কুলের ভর্তির আগে আগে যখন পড়াতে চেষ্টা করেছি, তখন বুঝতে পেরেছি ও কতটা ডিভাইস আসক্ত হয়েছে। অনেক বলেও এই আসক্তি আমি ছাড়াতে পারছিলাম না।

মারামারি বা ভীষণ কড়া শাসন আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি আমার মতো করে কিছু স্টেপ নিলাম।

কন্যাকে ডিভাইস মুক্ত করতে ছোট বেলা থেকে কী কী করেছি তা সবার সাথে শেয়ার করছি।

আমার কন্যাকে আমি লেখায় আগ্রহী করতে একটা ডায়েরি কিনে দিয়েছিলাম। ওকে বললাম, তোমার যা ভালো লাগে, তা আমাকে বললে আমি লিখে দিব। কন্যা যেহেতু লিখতে পড়তে পারে না, তাই আমি লিখে দিতাম। এভাবে চলছে তবে ওর এই কাজ টা যে খুব ভালো লাগলো, তা নয়। তবে আমি লেগে রইলাম। দিনের নির্দিষ্ট একটা সময়ে আমি রোজ ডায়রি নিয়ে বসতাম। সে বলতো, আমি লিখতাম। রঙবেরঙের কলম দিয়ে লিখতাম। আর সুন্দর সুন্দর স্টিকার কিনে দিতাম ডায়রিতে লাগানোর জন্য।

এমন করে করে নিজে লেখা শেখার পর সে নিজেই লিখতে শুরু করলো। যা দেখে, যা ভালো বা মন্দ লাগে তা লিখে রাখতে শুরু করলো। সে কী করতে চায়, কেন করতে চায়, সবই লিখে রাখতে শুরু করলো ডায়রিতে। কোন কাজটি সে করতে পারে না তা ও লিখে রাখে। এমনকী ঝড় হলে যে ঘরে ধুলা বালু এসে পড়ে, এটা নিয়েও লেখে। আর লিখতে লিখতে ভীষণ সুন্দর বাক্যে লেখা শিখে গেলো!

এবার মা বাবার জন্যে সবচেয়ে জরুরি আলোচনা।

কখনো সন্তানের ডায়রি পড়বেন না, প্লিজ। সামনে পড়ে থাকলেও পড়বেন না। কন্যা নিজে লিখতে শেখার পর, আমি আর কোনো দিন ওর ডায়রি পড়িনি। টেবিলে খোলা পড়ে থাকে, তবুও আমি ছুঁই না। কন্যার কাছে আমি সেই জায়গা তৈরি করেছি যে, মা-বাবা তার লেখা পড়বো না। তাই আমার মেয়েও ডায়রিটা লুকানো বা তালা দিয়ে রাখতে চায়নি কোনোদিন।

আমার কন্যা বিশেষ কিছু লিখলে সে নিজেই আমাকে ডায়রি পড়তে দেয়। আমি তখন আমার মতামত দিই।

যদি বলে বাবাকে দেখিয়ো, দেখাই। এই টুকুই।

কিছু একটা গুছিয়ে লিখতে পারা একটা বড় গুণ। এর চর্চা এবং মনোযোগ ধরে রাখতে আপনার সন্তানকে পড়তে এবং লিখতে আগ্রহী করে তুলুন।

– মুসাররাত নাজ

(একজন টিনএজ কন্যার মা)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *